আতঙ্ক যেন এখনও কাটেনি বছর ষোলোর কিশোর শুভময় হালদারের। বিড় বিড় করে একটানা বলে চলেছে, “হিটার গরম হয়ে গেলে যেমন গন্ধ বার হয়, সেদিন ঠিক এমনই গন্ধ বেরোচ্ছিল।” সায় দিলেন তার মা, বাবাও। ট্রমা কাটেনি তাঁদেরও। জানালেন, কলকাতার মাটি ছোঁয়ার তখনও প্রায় ৪৫ মিনিট বাকি। আচমকাই ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা বিমান। ককপিট, কেবিন, বাথরুম যেদিকে তাকানো যায় শুধু কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। সেই সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট। বিপদ আঁচ করে মাঝ আকাশে তখন ভয় ও আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছে জনা ১৩৬ যাত্রী।
শুভময়ের কথায়, মিনিট খানেকের মধ্যে ধোঁয়া যেন আরও গাঢ় হল। আশপাশের কয়েকটি সিটে তখন কান্না জুড়ে দিয়েছে দু’তিনটি শিশু। আতঙ্কিত তাঁদের অভিভাবকেরাও। অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতে দৌড়াদৌড়ি করছেন বিমানসেবিকারা। সব মিলিয়ে থমথমে পরিবেশ।
ঘটনাটা গত সোমবার রাতের। জয়পুর থেকে কলকাতাগামী বিমান আচমকাই ধোঁয়ায় ভরে যাওয়ায় জরুরি অবতরণ করতে হয় পাইলটকে। ঘটনার ভিডিও মোবাইলে ধরে রাখেন বিষ্ণু সোম নামে এক যাত্রী। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সেই ভিডিও পোস্ট করা মাত্রই সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। টুইটারে বিষ্ণু লেখেন, “ইন্ডিগো ৬ই- ২৩৭ বিমানটি সোমবার রাতে অবতরণের আগে ধোঁয়ায় ভরে যায়। বিমানে সেই সময় ১৩৬ জন যাত্রী ছিলেন। প্রাণঘাতী ধোঁয়ায় যাত্রীরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।”
পাইলট জানিয়েছেন, বিপদ অনুমান করে কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে ইন্ডিগোর বিমানটি। অবতরণের পর আপৎকালীন দরজা দিয়ে যাত্রীদের হুড়মুড়িয়ে নেমে আসতে দেখার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বিমানের অন্য এক যাত্রীর কথায়, “আমাদের সিটে চুপচাপ বসতে বলা হয়েছিল। অক্সিজেন মাস্কগুলো ঠিকঠাক কাজ করছিল না। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিমানসেবিকারা। অবতরণের পর একটি বাসে চাপিয়ে আমাদের টার্মিনালে নিয়ে আসা হয়। ততক্ষণে বিমানবন্দরে দমকলকর্মীদের ভিড়।”
ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষও। বিমানের ইঞ্জিনের ত্রুটিগত কারণে এই সমস্যা হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা। সংস্থার মুখপাত্র বলেছেন, “ইঞ্জিনের ভিতর কোনওভাবে তেল লিক করছিল, তাই ধোঁয়ায় ভরে যায় ‘এ-৩২০নিও’ এয়ারবাসটি। এই যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।
Be the first to comment