সিদ্ধান্ত নিতে পারল না ভোপালের শিবাজি নগর স্কোয়ারের ইন্দিরা ভবন। নয়া দিল্লির তুঘলক রোড যে নামে সিলমোহর দেবে, মধ্যপ্রদেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন তিনিই। জয়ী বিধায়করা জানিয়ে দিলেন, “রাহুলজি যাঁকে বলবেন, আমরা তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী মানব।”
এমনিতেই মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের কোন্দল জাতীয় রাজনীতির খবর রাখা প্রায় সকলেরই জানা। কমলনাথের সঙ্গে দিগ্বিজয়ের দ্বন্দ, দিগ্বিজয়ের সঙ্গে সুরেশ পাচৌরির ঝগড়া, সুরেশের সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মন কষাকষি এই সবকে ডিঙিয়েই দেড় দশক পর হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যের মসনদ গেরুয়াবাহিনীর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু জেতার পর জল্পনা, কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী?
ডামাডোলে ভরা মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসের হাল ধরতে রাহুল গান্ধী দায়িত্ব দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান কমলনাথের উপর। ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা সাংসদ কমলনাথ। বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন। নবীন-প্রবীণদের এককাট্টা করে সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। শিবরাজের গদি টলিয়ে উনিশের সেমিফাইনাল জিতে নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাই অনেকটাই এগিয়ে তিনি। যদিও নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকেই এই রাজ্যের কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ ছবিটাই ফুটে উঠছিল।
কিন্তু পরিষদীয় দল সিদ্ধান্ত নিতে পারল না কেন? কেন বল পাঠাতে হলো হাইকম্যান্ডের কোর্টে?
অনেকের মতে, মাধবরাও-এর ছেলে জ্যোতিরাদিত্যও মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম দাবিদার। কমলনাথের থেকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জ্যোতিরাদিত্যর গ্রহণযোগ্যতাও বেশি বলে মত অনেকের। গোয়ালিয়রের তরুণ এই নেতা তো বুধবার সকালেই বলে দিয়েছেন, “দল দায়িত্ব দিলে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে আমার কোনও আপত্তি নেই।” ইঙ্গিত স্পষ্ট।
গণনা শুরু হয়েছিল ১১তারিখ সকাল আটটায়। ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা পেরিয়ে ক্যালেন্ডার যখন ১২তারিখে ঢুকে পড়েছে, ঠিক সেই সময়, অর্থাৎ মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঘোষণা করা হয় মধ্যপ্রদেশে কার ঝুলিতে কটি আসন।
২৩০ আসনের বিধানসভায় ম্যাজিক সংখ্যা ১১৬ থেকে দুটি আসন পিছনে ছিল কংগ্রেস। রাতেই একক বৃহত্তম দল হিসেবে রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে রেখেছিলেন মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম দাবিদার কমলনাথ। বুধবার সূর্য উঠতেই পরিষ্কার হয়ে যায় হিসেব। উত্তরপ্রদেশের ‘বুয়া-ভাতিজা’ তথা অখিলেশ-মায়াবতী কংগ্রেসকে সমর্থন করে দেন। আরও চারজন নির্দল বিধায়ক হাতে হাত রাখেন। এখনও পর্যন্ত যা হিসেব তাতে ১২১ জনের সমর্থন রয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক মাস পরেই দিল্লি দখলের লড়াই। এ তো ছিল উনিশের ট্রেলর। তাই লোকসভা পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশের দুর্গ অটুট রাখতে রাহুল হয়তো পোড় খাওয়া কমলনাথের হাতেই রাজপাটের চাবিকাঠি তুলে দেবেন।
Be the first to comment