কয়েকমাস আগে জোর করেই এককালের ঘোর শত্রু মহেন্দ্র রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল শ্রীসেন। নির্বাচিত সাংসদরা তাতে আপত্তি করছেন জেনে ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন পার্লামেন্টও। জানুয়ারির শুরুতে নতুন করে ভোটও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানলেন তিনি। পার্লামেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টের চাপের মুখে শনিবার ইস্তফাই দিলেন মহেন্দ্র।
এমপি শেষন সেমাসিংহে জানিয়েছেন, ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘোষণা করা হয়েছে, মহেন্দ্র আর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকবেন না। শুক্রবার তাঁর ছেলে নমিল রাজাপক্ষে জানিয়েছিলেন, দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে আমার বাবা ইস্তফা দেবেন। কিছুদিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, গত ২৬ অক্টোবর মহেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঠিকই কিন্তু তিনি বা তাঁর মন্ত্রিসভার কেউ কোনও ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারবেন না। আগে প্রমাণ করতে হবে, তাঁদের নিয়োগ বৈধ। একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কোর্টের এমন রায় অত্যন্ত অসম্মানজনক। এর পরে মহেন্দ্রর পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় ছিল না।
এর আগে আর একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, প্রেসিডেন্ট যেভাবে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন, তা বেআইনি। এর পরেই বোঝা যায়, মহেন্দ্রও হয়তো বেশিদিন গদি আঁকড়ে থাকতে পারবেন না।
মহেন্দ্র রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কায় স্ট্রংম্যান বলে পরিচিত, তাঁর আমলে দেশে তামিলদের বিদ্রোহ দমন করা হয়। এলটিটিই নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ নিহত হন। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। মহেন্দ্রর বিরুদ্ধেও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। গত ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে জোট বেঁধে লড়াই করেছিলেন শ্রীসেন ও রনিল বিক্রমসিংহে। জেতার পরে শ্রীসেন হন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমসিংহে।
গত ২৬ অক্টোবর শ্রীসেন আচমকা বিক্রমসিংহেকে বরখাস্ত করেন। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে নানা পলিসি নিয়ে বিতর্ক চলছিল। অভিযোগ, শ্রীসেন চিনের কোম্পানিগুলিকে শ্রীলঙ্কায় নানা কাজের বরাত দিতে আগ্রহী ছিলেন। বিক্রমসিংহের তাতে আপত্তি ছিল। কিন্তু তাঁকে বরখাস্ত হতে হবে কেউ ভাবতে পারেননি।
মহেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। দু’বার চেষ্টা করেও তিনি গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন। তার পরেও তিনি পদত্যাগ করতে চাননি।
তিনি পদত্যাগ করার পরে শ্রীসেন হয়তো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রমসিংহকেই ফের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে ডাকবেন। বিক্রমসিংহে আগামী রবিবার শপথ নিতে পারেন।
Be the first to comment