ব্যাপারটা এক্কেবারেই কাকতালীয়। সোমবার মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কমলনাথ। তার আগেই ৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার ঘটনায় অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট এবং সঙ্গে সঙ্গে শপথের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে একদা কলকাতার ছেলের ইস্তফার দাবিতে নেমে পড়লেন অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে বিজেপির মুখপাত্ররা। কারণ, তাঁদের অভিযোগ, ৮৪ সালের দাঙ্গার ঘটনায় জড়িত ছিলেন কমলনাথও।
বস্তুত মধ্যপ্রদেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কমলনাথের নাম ঘোষণা হতেই, তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে ৮৪-র দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে অভিযোগ তুলে পথে নেমে পড়ে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী অকালি দল। দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে অকালি নেতারা বলেন, রেকাব গঞ্জের গুরুদ্বার জ্বালানোর সময় আশপাশে দেখা গিয়েছিল কমলনাথকে। আবার দিল্লি-বিজেপি-র মুখপাত্র তথা শিখ নেতা তাজিন্দর পাল সিংহ বাগ্গা ঘোষণা করে দেন, কমলনাথ শপথ নিলেই তিনি আমরণ অনশনে বসবেন।
ফলে বিজেপি-র তরফে তালগোল পাকানো শুরু হয়েছিলই। সোমবার দিল্লি হাইকোর্টের রায় ঘোষণা হতেই তাতে যেন আরও দম পেয়ে গেল বিজেপি। এমনকী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বলেন,“কংগ্রেস বরাবরই শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্তদের আশ্রয় দিয়েছে? যে সব কংগ্রেস নেতারা দাঙ্গায় জড়িত ছিল তাদের লোকসভা ভোটের টিকিট দিয়েছে। কেউ কেউ কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছে। এমনকী আজ তো আবার এক জন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন।”
শিখ দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেও কংগ্রেস নেতারা কমলনাথকে নিয়ে বিজেপি ও অকালি-র এই প্রচারকে নিম্ন মানের রাজনীতি বলেই সমালোচনা করছেন। কমলনাথের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, সোমবার বিকেলে এ বিষয়েও ব্যাখ্যাও দেবেন মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, শিখ দাঙ্গার ২১ বছর পর ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ওঠে। বাজপেয়ী জমানায় ৮৪-র দাঙ্গা নিয়ে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠেনি।
বিচারপতি নানাবতী কমিশনও তাঁর বিরুদ্ধে বিরূপ কোনও মত দেয়নি। এমনকী তিনি সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দিল্লির পর্যবেক্ষক থাকাকালীন, রাজধানী শহরে পর পর দুটি ভোটে জেতে কংগ্রেস। তার থেকেও বড় কথা হল, ৮৪ সালের দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে সংসদে যখন বিতর্ক হয়েছিল তখন শিরোমণি অকালি দল নেতা তথা পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্র সুখবীর বাদল তাঁর নামে কোনও অভিযোগ তোলেননি। ফলে বিজেপি এখন যেটা করছে সেটা স্রেফ নোংরা রাজনীতি।
প্রসঙ্গত, এর আগে পঞ্জাবে বিধানসভা ভোটের সময়েও কমলনাথের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিল। তখন দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পঞ্জাবের দায়িত্বে ছিলেন কমলনাথ। বিতর্ক এড়াতে শেষমেশ পঞ্জাবের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেস এখন আর আগের মতোই নেই। এসপার ওসপার করতে প্রস্তুত।
কমলনাথের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউপিএ মন্ত্রিসভায় তাঁর সতীর্থ কপিল সিব্বলও। তিনি বলেন, শিখ দাঙ্গার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। আদালতে যে প্রক্রিয়া চলছে তাও স্বাগত। কিন্তু প্রশ্ন হল, গোধরা দাঙ্গায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত মায়া কোদনানীর নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না? এর পরেও কেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না তিনি!
Be the first to comment