যুদ্ধের ৪৭ বছর বাদে প্রথমবার মৃত স্বামীর ছবি দেখলেন অমরা দেবী

Spread the love

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধে শহিদ হন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈনিক সুন্দর সিং। কয়েকদিন আগেই বিবাহ হয়েছিল তাঁর। স্ত্রী অমরা দেবীর তখন বয়স মাত্র ১৮। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা। বিবাহের কোনও ছবি ছিল না। যুদ্ধের ৪৭ বছর বাদে প্রথমবার মৃত স্বামীর ছবি দেখলেন অমরা দেবী। সৌজন্যে, ডায়রেক্টরেট অব সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডিপার্টমেন্ট (ডিএসডব্লুআরডি)।

সুন্দর সিং ছিলেন ব্রিগেড অব গার্ডস রেজিমেন্টের সদস্য। বিবাহের কিছুদিন বাদেই যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানে তিনি নিহত হন। তাঁর দেহ বাড়িতে আনা হয়নি। যুদ্ধক্ষেত্রের কাছেই কোথাও দাহ করা হয়। তার পর থেকে এতদিন স্বামীর একটি ছবির জন্য বারে বারে সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন করেছেন অমরা দেবী। কিন্তু তাঁকে বার বার জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনীর কাছে সুন্দর সিং-এর কোনও ফটো নেই।

এখন অমরা দেবীর বয়স ৬৫। ডিএসডব্লুআরডি জানতে পারে এক বিধবা হন্যে হয়ে তাঁর মৃত স্বামীর ছবি খুঁজছেন। তারা সুন্দর সিং-এর সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারও কাছে তাঁর কোনও ছবি আছে কিনা জানতে চায়। মহারাষ্ট্রে সুন্দর সিং-এর রেজিমেন্টের হেড কোয়ার্টার্সেও খুঁজে দেখা হয়। অনেক খোঁজাখুজির পরে সেখানে একটা গ্রুপ ফটোতে সুন্দর সিংকে দেখা যায়।

গত ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশ যুদ্ধের বিজয় দিবস। সেই উপলক্ষে উত্তরকাশী জেলা প্রশাসন অমরা দেবীর হাতে তাঁর স্বামীর ছবি তুলে দেয়। ছবি নেওয়ার সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। তাঁর কথায়, এতদিনে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আমার স্বামীকে কেমন দেখতে ছিল, কেমন করে সে কথা বলত। কিন্তু ছবি দেখে মনে হচ্ছে, সে জীবন্ত হয়ে উঠেছে আবার। আর্মি বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ওই ছবিটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুদ্ধ শুরু হয়। পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে একইসঙ্গে পাকিস্তানের মোকাবিলা করে ভারতীয় বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার পতন ঘটে। ১৩ দিনের যুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। ৯০ থেকে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধবন্দি হয়। যুদ্ধে কয়েক লক্ষ নিরীহ মানুষ মারা যান।

সেই যুদ্ধে যারা আহত হয়েছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে সেনাবাহিনী। প্রয়োজনে তাঁদের কৃত্রিম হাত-পা দেওয়া হচ্ছে। বিজয় দিবসে একথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*