বাংলায় আসবে স্বর্ণযুগ। নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাজেটের বাইরে উন্নয়নখাতে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে রাজ্য সরকার। কোন কোন খাতে এই টাকা খরচ করা হবে তা বিস্তারিতভাবে জানান মুখ্যমন্ত্রী। জোর দেওয়া হবে পরিকাঠামো তৈরিতে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের বাজেটে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ধার্য আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে রাজ্য সরকার এই অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকার সংস্থান করতে পেরেছে। কেন এই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে জোর দেওয়া প্রয়োজন সে কথাও ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, পরিকাঠামো ছাড়া কোনও উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা— যে বিষয়ই আপনি ভাবুন না কেন উন্নয়ন করতে গেলে পরিকাঠামোর ওপর জোর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। বলা ভালো, পরিকাঠামোগত সম্পদ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এইসব প্রকল্প রূপায়িত হলে বাংলা বিশ্বসেরা হবে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি এই প্রকল্পগুলি দ্রুত রূপায়িত করবে। এদিনও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা তলানিতে পৌঁছেছিল। ২০১০-১১ সালে রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে মোট ব্যয় ছিল ১৪,৬১৫ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় ছিল ২,২৭৫ কোটি টাকা। ফলে যা হওয়ার হয়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, অন্যান্য পরিকাঠামোর অবস্থাও অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে গেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের সরকার আসার পর আমরা রাস্তাঘাট, সেতু, উড়ালপুল এবং অন্যান্য সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। ২০১০-১১ অর্থবর্ষের তুলনায় পরিকল্পনাখাতে মোট ব্যয় তিন গুণ বাড়িয়ে ২০১৬-১৭ সালে ৪৯,৪৭০ কোটি টাকা করেছি। পরিকল্পনা উন্নয়নে যেমন ব্যয় তিন গুণ বেড়েছে পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে সেই ব্যয় প্রায় ৬ গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই রাস্তাঘাট, সেতু, উড়ালপুল, উড়ালপথ, জল প্রকল্প, বিদ্যুতায়ন, গুদাম ইত্যাদি প্রকল্পে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে করা হবে। যেসব প্রকল্পগুলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলি হলো—
রাস্তা— কলকাতা-বাসন্তী-ঘটকপুকুর পর্যন্ত ২৫ কিমি. রাস্তা চার লেনের করা হবে, খরচ ৩০০ কোটি টাকা। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ৪২ কিলোমিটার চার লেনের হবে এবং বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ কিলোমিটার রাস্তা এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে, খরচ ১,৫৫০ কোটি টাকা। বড়জাগুলি কাঁপা মগরা ভায়া ঈশ্বর গুপ্ত সেতু যুক্ত হবে, খরচ ১৭০০ কোটি টাকা। আরামবাগ-চাঁপাডাঙা ২২ কিমি. রাস্তা চার লেনের হবে, খরচ ২০০ কোটি টাকা। বাঁকুড়া দুর্গাপুর রোড ৪০ কিমি. রাস্তা দুটি ব্রিজ-সহ চার লেনের হবে, খরচ ৪০০ কোটি টাকা।
সেতু ও উড়ালপুল— ভাগীরথী নদীর উপর কালনা-নৃসিংহপুর সংযোগকারী সেতু (৫০০ কোটি টাকা) এবং বজবজ-ফুলেশ্বর সেতু। বি টি রোডে টালা ব্রিজ ও ডানলপের মধ্যে গাড়ি চলার আন্ডারপাস (৩০০ কোটি টাকা), চিড়িয়া মোড়-ডানলপ ৬ লেন (১০০ কোটি টাকা), এজেসি বোস রোডে মানিকতলা মোড়ে উড়ালপুল (৩৫০ কোটি টাকা), বীরভূমে অজয় ব্রিজ (১৫০ কোটি টাকা), গণেশ অ্যাভিনিউতে উড়ালপুল (৩৭৫ কোটি টাকা), তারাতলা-টালিগঞ্জ-আনওয়ার শা-যাদবপুর ফাঁড়ি উড়ালপুল (২৭০ কোটি টাকা), গড়িয়াহাট রোড সাউথে উড়ালপুল (২৪৮ কোটি টাকা), শিয়ালদহ উড়ালপুল থেকে শিয়ালদহ স্টেশন র্যাম্প (২১ কোটি টাকা), কলেজ মোড়- সেক্টর ফাইভে উড়ালপুল (১২০ কোটি টাকা), রোড ওভারব্রিজ সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ এবং মা ফ্লাইওভার থেকে গুরুসদয় দত্ত রোড (৬৮ কোটি টাকা), ই এম বাইপাস থেকে নিউ টাউন এলিভেটেড করিডর (৬১০ কোটি টাকা)
জল প্রকল্প— ডানকুনি, উত্তরপাড়া, বৈদ্যবাটী, রিষড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি (১,৩৬৮ কোটি টাকা)
বিদ্যুৎ— কোলাঘাটে ১, ২ ও ৩ নং ইউনিটের আধুনিকীকরণ, বিধাননগর-নিউ টাউনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।
এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানান, অন্ডাল থেকে কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চালুর প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প মিলেনিয়াম পার্কে কলকাতা আইয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বেহালা, বালুরঘাট, কোচবিহার, মালদহে ছোটো ছোটো বিমানবন্দরগুলিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৬টি হেলিপ্যাডও তৈরি করা হয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কলকাতার সঙ্গে জেলার যোগাযোগ বাড়াতে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প এনেছিলেন। তার ফলেই ব্যারাকপুরের সঙ্গে গড়িয়ার যোগাযোগ হচ্ছে। অর্থাৎ শহরতলিজুড়ে বিস্তীর্ণ যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে।
Be the first to comment