নিজামের শহরে দুর্গাপুজো

Spread the love

অনিন্দিতা মজুমদার : দক্ষিণ ভারতের আর চারটে শহরের চেয়ে হায়দ্রাবাদ অনেকটাই আলাদা। স্থানীয় মানুষজন দিব্যি হিন্দি বলেন, প্রাদেশিকতার অনর্থক খোঁচা নেই। আপাদমস্তক কসমোপলিটান শহর।

হায়দ্রাবাদের সঙ্গে বাঙালির যোগাযোগও আজকের নয়। সেই নিজামের আমলে সুদূর গ্রামবাংলা থেকে হায়দ্রাবাদে পাড়ি দিয়েছিলেন সরোজিনী নাইডুর বাবা, অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিখ্যাত নিজাম কলেজে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে এসেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে সদ্য পাশ করা বাঙালি ইঞ্জিনিয়াররা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রে চাকরির সূত্রে হায়দ্রাবাদে পাড়ি জমিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির রমরমার সুযোগ নিয়ে প্রতিবছরই চাকরি নিয়ে হায়দ্রাবাদে আসেন বেশ কিছু বাঙালি যুবক-যুবতী।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে একই সময়ে স্থানীয় উৎসব বাথুকাম্মা পালিত হয়। মহালয়ার দিন শুরু হয়ে এই ফুলের উৎসব চলে দুর্গাষ্টমী পর্যন্ত। নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা গঠিত হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় বাথুকাম্মা; মূলত মহিলারাই এই উৎসব পালন করেন। এতে অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-এর স্ত্রী, মেয়ে ও পুত্রবধূ। এ ছাড়াও শহরে মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় নভরাত্রি। তাই একই সঙ্গে তিনটে উৎসবের আনন্দে, হায়দ্রাবাদ রকমারি আলো আর রংবেরঙের ফুলের সাজে সেজে ওঠে।

দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে চোখে পড়ে এক ধারে ফুল দিয়ে সাজিয়ে, নাচে-গানে বাথুকাম্মা পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, অন্য দিকে হচ্ছে সন্ধ্যারতি। প্রতিরক্ষা দফতরের গবেষণারত বাঙালি বিজ্ঞানীদের কৃষ্টি গোষ্ঠীর পুজোয় গেলে ধরা পড়বে এই দৃশ্য। বাঙালি ও তেলেগু সবাই অংশগ্রহণ করেন এই পুজোয়। আবার নবমী বা দশমীর দিন ওই একই প্যান্ডেলে দেখা যায় মহা উল্লাসে বাজছে গান আর তার সঙ্গে চলছে ডান্ডিয়া নাচ।

 

তা বলে বাঙালিয়ানায় কোনও ঘাটতি থাকে না হায়দ্রাবাদের পুজোয়। কুমোরটুলির প্রতিমা বা চন্দননগরের আলোর জৌলুস নাই-বা থাকল, নাই-বা হলো থিম পুজোর মাতামাতি, আয়োজনে যে টুকু ফাঁক থাকে তা আন্তরিকতা দিয়ে ঢেকে দেন পুজোর উদ্যোক্তারা। দুপুরবেলা যে কোনও পুজো প্যান্ডেলে ভোগের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ুন, খিচুড়ি, ফুলকপির তরকারি ও চাটনি মিলবেই মিলবে। সেই সঙ্গে দেখা মিলবে কর্মকর্তার মুখে এক গাল হাসি। কেউ একটি বারের জন্যও প্রশ্ন করবে না— ‘আপনি চাঁদা দিয়েছেন?’ রামকৃষ্ণ মঠের উল্টো দিকে ইন্দিরা পার্কে অনুষ্ঠিত হয় বাঙালি সমিতির পুজো। চার দিনে প্রায় লাখ খানেক লোকের পাত পড়ে বলে উদ্যোক্তারা দাবি করেন।

বাঙালির পুজো মানে অবশ্যই পেট পুজো। সাইবারাবাদ থেকে চারমিনার সব পুজো প্যান্ডেলের স্টলে বাঙালির রসনা তৃপ্ত করতে হাজির স্পেশাল মেনু— কলকাতার বিরিয়ানি, চিকেন চাপ, চিকেন রোল, মোগলাই পরোটা, ফিশফ্রাই, মাছের চপ, ভেজিটেবিল চপ, ডিমের ডেভিল, কলকাতার রকমারি মিষ্টি আরও কত কি, যেগুলো অন্য সময়ে অমিল। সঙ্গে থাকে বাংলা বইয়ের দোকান আর শাড়ির স্টল। বেঙ্গলিজ ইন হায়দ্রাবাদের দৌলতে দিব্যি বাসে চেপে পুজো পরিক্রমা করা যায়। তাই কলকাতায় পুজোর ভিড়ের চাপে মন যদি হাঁসফাঁস করে, তাহলে হায়দ্রাবাদ ঘুরে যান- চারমিনার দর্শন আর দেবী দর্শন দুইই হবে। ছবি- ফাইল চিত্র

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*