পিয়ালি আচার্য,
ভিডিও সৌজন্যে- (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক)
বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে বসেছে ২দিন ব্যাপী শিল্প সম্মেলন। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট(বিজিবিএস)- এর মঞ্চে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাতের বর্তমান চেনা ছবি ফুটে উঠলো। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণের মধ্যে বললেন সামনে নির্বাচন। ১ মাসের মধ্যে দিন ঘোষণা হবে। যেসব শিল্পপতি বন্ধুরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের বলি আপনারা দেশে ফিরে আসুন। এঁদের দেশ ছাড়ার কারন হিসাবে সরাসরি অভিযোগের ইঙ্গিত দেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে। এও বলেন যে এটা এই বিষয়ে আলোচনা করার প্ল্যাটফর্ম নয়, তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি। শিল্পপতিদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমি জানি আপনারা অনেক সমস্যা, প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। সরকারের পরিবর্তন হলে আমরা নতুন শিল্প নীতি তৈরি করবো, এই নীতির ফলে দেশে শিল্প সম্ভাবনা আরও গতি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বিজিবিএসের মঞ্চেও পরিষ্কার বলে দিলেন যে, কেন্দ্রের সরকারে বদল হচ্ছে।
‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’ অর্থাৎ বাংলা বলতে বোঝায় বানিজ্য। এবারের বিজিবিএসের স্লোগান এটাই। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও ঘুরেফিরে আসে এই স্লোগান। তিনি বলেন বাংলায় শিল্পের প্রতি সদর্থক মানসিকতা দেখা দিয়েছে। পুরনো চিন্তাধারা বদলেছে। বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের অপশাসনের ফলে বাংলা পিছিয়ে গিয়েছিলো। আমার পূর্বসুরিদের সময় ৭৫ লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকারের আমলে কোনও শ্রমদিবস নষ্ট হয়না। বনধ আমরা করতে দিই না। রাজ্যের মানুষও বনধের বিপক্ষে। আমাদের বাংলায় প্রতিভা আছে। শিল্পের জন্য আমরা ল্যান্ড ব্যাঙ্ক, ল্যান্ড ম্যাপ, ল্যান্ড ইউজ পলিসি করেছি। চা বাগান থেকে শুরু করে সর্বত্র শিল্প বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছি আমরা। এমএসএমই-তে আমরা ভারতে ১ নম্বরে। আমাদের জিডিপি গ্রোথ জাতীয় জিডিপি গ্রোথের থেকেও বেশী, এক্ষেত্রেও আমরা নম্বর ১। গ্রামীন আবাসনে আমরা নম্বর ওয়ান, ই-গভর্নেন্সেও আমরা নম্বর ওয়ান। ১০০ দিনের কাজেও আমরা নম্বর ওয়ান। মোদীর আমলে গত এক বছরে দেশের ২ কোটি মানুষের চাকরি চলে গেছে। সেই জায়গায় আমরা আমাদের রাজ্যে ৪০% বেকারী কমিয়েছি।
বাংলা বলতে বোঝায় এগিয়ে যাওয়া, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন বাংলা হলো এমন জায়গা যেখানে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য দেখা যায়। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। এখানে নানা ভাষাভাষী, নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে থাকেন। এরপর উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির ( Eight sisters states) প্রবেশদ্বার বাংলা। নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ব্যাংকক, দুবাই প্রভৃতি দেশগুলিও বাংলা থেকে খুবই কাছে। যার ফলে বাংলায় বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হয় না। এরপর বাংলায় উন্নয়নের খতিয়ান দেন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৩০০টির বেশী আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ করেছি আমরা। আমাদের দক্ষ কর্মী আছে। নাসা থেকে গ্রাউন্ড লেভেল, আইটি থেকে কোল মাইন, এমনকি পাওয়ার সেক্টরেও আমরা এক নম্বর। আমাদের ট্যালেন্টেড বা মেধাবী কর্মীরা হাভার্ড, কেমব্রিজ সহ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বাংলায় মেধা আছে, তাই একে হিউম্যান ক্যাপিটাল বলা হয়। আমাদের এখানে ২৪X৭ বিদ্যুৎ থাকে। কোনও লোডশেডিং নেই, কোনও পাওয়ার ক্রাইসিস নেই। বিমানবন্দরের পাশাপাশি আমাদের গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দরও আছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা আমরা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে দি। হার্ট, লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অপারেশন বিনামূল্যে হয়। আমরা বিদেশ থেকে নম্বর ওয়ান পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। যুগান্তকারী প্রকল্প কন্যাশ্রী চালু করে বাল্যবিবাহ রোধ করা গিয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতে মহিলাদের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করেছি। মহিলাদের জনপ্রতিনিধিত্বে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথা অনেক দলই বলে, এটা অনেক পুরনো ইস্যু, কিন্তু এটা এখনও সংসদে পাশ হয়নি। কিন্তু আমাদের লোকসভার মহিলা নির্বাচিত সদস্য ৩৪ শতাংশ।
আমরা সংখ্যালঘুদের স্কলারশিপ দিয়েছি। আমরা পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যথাসাধ্য করেছি। আমরা নিপীড়িত, প্রান্তিক মানুষদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মনে রাখবেন নিপীড়িত, প্রান্তিক মানুষরা যদি সুখী না হয় তাহলে শিল্পস্থাপন সফল হয় না, দেশ সুখী হয় না। আমরা কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছি। আমি ইতালির মিলান গিয়েছিলাম, জার্মানিও গিয়েছি ওখানে দেখেছি বাংলার শিল্পস্থাপন সম্পর্কে ওখানকার মানুষের ধারনা বদলেছে। মুখ্যমন্ত্রী লুফৎহনস এয়ারলাইন্স চালু করার মাধ্যমে কলকাতা থেকে সরাসরি জার্মানি যাওয়ার ফ্লাইট পুনরায় চালু করার কথা বলেন। ফ্রাঙ্কফুটের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি বিমান চলাচলের কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন যে, কুলপিতে বন্দর হচ্ছে। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যৌথ আদান-প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। প্রচুর বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে। আমরা সিলিকন ভ্যালির মতো নিউটাউনে আইটি হাব করেছি। আমদের ফাইনান্সিয়াল হাবও আছে, যেখানে ফাইনান্সিয়াল ইন্সটিটিউটগুলো আছে। আমরা বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে জোর দিয়েছি, রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের জন্য।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭ সালে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে দেশের ১ নম্বর হবে বলে বলেছেন মুকেশ আম্বানি। মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ আম্বানির এই ভিশনের প্রশংসা করেন। শিল্পপতি বন্ধুদের কাছে তাঁর বার্তা কথা কম, কাজ বেশী। শুধু শিল্প প্রস্তাব আনলেই হবে না। সেগুলিকে কাজে পরিণত করে সরাসরি বিনিয়োগ করতে হবে। সবশেষে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বলেন, চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির…
শুনুন এদিন কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
দেখুন এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজিবিএস সম্পর্কে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী? নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন!
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2312189292181732&id=364551790278835
Be the first to comment