পিয়ালি আচার্য,
ছবি- প্রশান্ত দাস
শনিবার ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, আর পাঁচটা দিনের মতোই বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন রূপালী। কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস। তাঁর শিশুপুত্রকে সাজিয়েগুজিয়ে পাঠিয়েছিলেন বাবা সত্যজিতের সঙ্গে পাড়ায় সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে, বাড়ি ফিরে এসেছে শিশুটিও। কিন্তু ফিরলেন না সত্যজিৎ। অনুষ্ঠানস্থলে গুলিতে নিহত হলেন তিনি।
নদীয়ার তেহট্টের হরিপুরের বাসিন্দা রূপালী বিয়ে হয়ে সত্যজিতের বাড়িতে এসেছিলেন। মনে তখন অনেক রঙিন স্বপ্ন। কিন্তু ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ গুলিতে নিহত হলেন সত্যজিৎ। সব স্বপ্ন যেন মুহূর্তের মধ্যে সেদিন খানখান হয়ে যায়। তখন সামনে তাকালে চারদিক অন্ধকার দেখেন রূপালী। ছোট শিশুকে বুকে জড়িয়ে তাঁর বুকফাটা আর্তনাদের ছবি এখনও কেউ ভোলেন নি। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন থেকেই ভেবেছিলেন কী করে রূপালীর যন্ত্রণা একটু লাঘব করা যায়! রূপালী হয়তো জানতেন না কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে মনে ঠিক করে রাখেন রানাঘাটের প্রার্থী করবেন রূপালীকেই।
তখনও তাঁর ২৫ বছর হয়নি। টিভির পর্দায় দলনেত্রী রূপালীর নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন। তার কিছুদিন আগেই তাঁর বায়োডাটা চাওয়া হয়েছিলো দলের তরফ থেকে। শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী রূপালী তখনই বুঝতে পেরেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে গুরুদায়িত্ব দিতে চান, পাঠাতে চান দিল্লিতে লোকসভার ফ্লোরে। প্রার্থী ঘোষণার পরই স্বামীর স্মৃতিকে বুকে বহন করে নিয়ে প্রচার শুরু করেন রূপালী। একেবারে ঘরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন রূপালী। দু’বেলা স্বামীর জন্য নিজের হাতেই করতেন রান্না। মাংস-ভাত রান্না করে অপেক্ষায় থাকতেন সত্যজিতের। সেসব এখন স্মৃতি।
এখন রোজ সকাল থেকে রাত্রি অবধি সারাদিন ধরে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন তিনি। রোজদিনের সঙ্গে নবদ্বীপের ভালুকা গ্রামপঞ্চায়েতে মুখোমুখি হলেন প্রার্থী রূপালী বিশ্বাস। রোজদিনের যুগ্ম সম্পাদক পিয়ালি আচার্যকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বললেন, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। তাই শিশু সন্তানকে সামলেও পার্লামেন্টের ফ্লোরে এলাকাবাসীর চাহিদাকে তুলে ধরবেন সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। রূপালীর কথাবার্তায় দলনেত্রীকে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করার চেষ্টা প্রচুর। বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী- নানা কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন মানুষ। তাই উন্নয়নের স্বাদ পাওয়া মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সমর্থন করবেন। সেজায়গায় মোদীর ভাঁড়ার এই বাংলায় শূন্যই থাকবে। গত ৫ বছরে মানুষের কল্যাণে সেরকম কিছুই প্রধানমন্ত্রী করে দেখাতে পারেন নি।
রূপালীর জয় নিশ্চিত, একথা বলছেন এলাকার বেশীরভাগ মানুষ। রূপালী নিজেও জানেন তা। তবু কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝেই উদাস হয়ে যান তিনি। চোখ ভরে আসে জলে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে জীবনটা যে হয়ে গেছিলো সাদা-কালো। একমাত্র সম্বল বলতে ছিল ছোট্ট শিশুটি। মনের বাগান যেন হয়ে গিয়েছিলো ধূসর মরুভূমি। সেই সাদা-কালো জগতে রঙের প্রলেপ দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে বসে শুধু গুমরে মরা নয়, শুধু অপ্রাপ্তি-যন্ত্রণা-কান্না নিয়ে বাঁচা নয়। মনের শুকনো বাগানে ঘাসের উপর জোড়া ফুল লাগিয়ে রূপালীর জীবনকে সতেজ, সবুজ ও সুন্দর করার চেষ্টা করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রূপালী জয়ী হন, মনে লাগুক নতুন রঙ; এটাই রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ মানুষের চাহিদা।
শুনুন এদিন রোজদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বললেন রূপালী?
দেখুন ছবি-
Be the first to comment