মমতার উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেবেন মানুষ; বললেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী মানস ভূঁঞ্যা

Spread the love

পিয়ালি আচার্য,

ছবি- মৈনাক সাউ,

মানস রঞ্জন ভূঁঞ্যা, সবং বিধানসভা কেন্দ্রের সঙ্গে যার নাম প্রায় সমার্থক। ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে, দেখেছেন কংগ্রেস করতে। কৃতিত্বের সঙ্গে ডাক্তারি পাশ করা সত্ত্বেও, লোভনীয় কেরিয়ার ছেড়ে রাজনীতিতে পুরোদমে অংশগ্রহণ করেন। কংগ্রেসি রাজনীতিতে মানস বাবুর মতো শিক্ষিত, বিদগ্ধ মানুষ দলকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থেকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, মন্ত্রী থেকে সাংসদ সব পদেই তিনি রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। মানসবাবুর ভাষায় দীর্ঘকাল মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে লড়াই করে ক্লান্ত হইনি, এগিয়ে চলেছি। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেসের জগাই, মাধাইরা যখন তাঁকে অপমান করেন তখন বাধ্য হন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে।

নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। তাঁকে পাঠিয়েছেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ অর্থাৎ রাজ্যসভায়। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে যখন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেন তখন মানুষের জন্য লড়াই করে আসা মানস চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন বিরোধী প্রার্থীদের। বলেন, এটা ব্যাক্তি আক্রমণ নয় আদর্শের লড়াই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞের এক সৈনিক আমি, বলেন মানস। সোমবার ২২ এপ্রিল মেদিনীপুরের বটতলাচকে মা কালীকে পুজো দিয়ে মনোনয়ন পত্র পেশ করলেন ডাঃ মানস ভূঁঞ্যা। এই মেদিনীপুর আসন ২০১৪ সালে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সাংসদ হয়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিআইএর প্রবোধ পান্ডা, তৃতীয় স্থানে বিজেপির প্রভাকর তিওয়ারি। ২০০৯ সালে এই আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন সিপিআইএর প্রবোধ পান্ডা। দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। ২০০৪ সালেও এই আসনে জিতেছিলেন সিপিআইয়ের প্রবোধ পান্ডা, দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির রাহুল সিনহা। ২০০১ সালে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন সিপিআইয়ের প্রবোধ পান্ডা (সিপিআই নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের প্রয়াণে)।

এই মেদিনীপুর আসনটি এককালে বাম দুর্গ হলেও এর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভারতীয় জনসংঘ থেকে কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল থেকে বাংলা কংগ্রেস বিভিন্ন সময় জয়ী হয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থী। যেমন ১৯৫১ সালে দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় জনসংঘের হয়ে এই আসন থেকে জয়লাভ করেন। এই সময় মেদিনীপুর থেকে ২ জন দাঁড়াতেন; একজন প্রার্থী জেনারেল এবং একজন এস.টি। ১৯৫১ সালে এই তপশীলি উপজাতি আসনে জিতেছিলেন ভারত লাল টুডু, তিনি জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। ১৯৫৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসের নরসিংহ মাল্লা জয়লাভ করেন। তপশীলি উপজাতি আসনে জয়ী হন সুবোধ হাঁসদা। দ্বিতীয় স্থানে ছিল যথাক্রমে সিপিআই ও প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি। ১৯৬২ সালে গোবিন্দ কুমার সিংহু জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে এই আসন থেকে জয়ী হন। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিআইয়ের সরোজ রায়। ১৯৬৭ সালে শচীন্দ্র নাথ মাইতি বাংলা কংগ্রেসের টিকিটে এই আসন থেকে জয়ী হন। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন কংগ্রেসের গোবিন্দ সিংহু। ১৯৬৯ সালে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী ভি.কে কৃষ্ণা মেনন বাংলা কংগ্রেসের টিকিটে এই আসন থেকে জয়ী হন।

মানসবাবু বলেন, কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন কৃষ্ণা মেননের হয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। বাম সমর্থিত ইউনাইটেড ফ্রন্ট বাংলা কংগ্রেসের কৃষ্ণা মেননকে সমর্থন করে। পরাজিত হন কংগ্রেসের কৃষ্ণদাস রায়। ১৯৭১ সালে কংগ্রেসের সুবোধ চন্দ্র হাঁসদা এই আসন থেকে জয়ী হন। দ্বিতীয় হন সিপিআইয়ের নারায়ণ চৌবে। ১৯৭৭ সালে ভারতীয় লোকদলের সুধীর কুমার ঘোষাল জিতে আসেন এই আসন থেকে। দ্বিতীয় স্থানে আবারও নারায়ণ চৌবে (সিপিআই)। ১৯৮০ ও ৮৪ পরপর এই আসন থেকে জেতেন নারায়ণ চৌবে। দুবারই দ্বিতীয় স্থান দখল করে কংগ্রেস। তারপর দুঁদে সিপিআই নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ১৯৮৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ অর্থাৎ আমৃত্যু এই আসন থেকে টানা ৫ বার সাংসদ হন (সিপিআইয়ের টিকিটে)। বলা বাহুল্য, ইন্দ্রজিৎ বাবু কেন্দ্রে দেবেগৌড়া সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছিলেন। ইন্দ্রজিৎ বাবুর সময়েও তিনবার কংগ্রেস ও দুবার বিজেপি দ্বিতীয় স্থান দখল করে।

আসলে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা সাঁওতাল বিদ্রোহ, চূয়াড় বিদ্রোহ নানা বিপ্লবী আন্দোলনের পীঠস্থান হলো এই মেদিনীপুর। অবিভক্ত মেদিনীপুর একসময় দেশের বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিলো। তাই মেদিনীপুরের মানুষ অত্যন্ত সচেতনভাবে, নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করেন তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এবারে মানসবাবুর সঙ্গে লড়াই হবে বিজেপির দিলীপ ঘোষের। দিলীপ বাবু বিজেপির রাজ্য সভাপতি। কীভাবে মোকাবিলা করবেন দিলীপ বাবুর? জবাবে মানসবাবু বলেন, উনি কখনও পাগড়ি পড়ছেন, কখনও তরবারি হাতে নিচ্ছেন কিন্তু মেদিনীপুরের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রকৃত উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেবে। তাই ধর্মীয় মেরুকরণ সহ্য করবে না মেদিনীপুরের বিপ্লবী মাটি। ভূমিপুত্র মানস তাই জেতার ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী।

রোজদিনের যুগ্ম সম্পাদক পিয়ালি আচার্যের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মানস বললেন মমতার উন্নয়নে বিজেপি হবে ফিনিশ। আমরা নেত্রী মমতার সৈনিক তথা কর্মীরা দিল্লির মসনদে দেখতে চাই একজন বাঙালী প্রধানমন্ত্রী। বলা বাহুল্য তিনি আর কেউ নন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রোজদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বললেন মানস ভূঁঞ্যা? শুনুন!

দেখুন ছবি-

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*