আজ ২৫শে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মজয়ন্তী। গান লিখেছেন। লিখেছেন গল্প প্রবন্ধ নাটক উপন্যাস। তবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কাছে কবিগুরু। ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ ( ইংরেজির ১৮৬১ সালের ৭ মে) কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। বাবা ও মায়ের নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।
ভর্তি হয়েছিলেন স্কুলে। তবে প্রথাগত শিক্ষার প্রতি ছাত্রাবস্থাতেই আগ্রহ হারান। ফলে বাড়িতে শিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি শিখতে থাকেন গান, কুস্তি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্য রচনা শুরু করেন। সেই লেখা ছাপা হতে থাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী সহ বিভিন্ন পত্রিকায়।
৫২টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। পাশাপাশি লেখেন ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটোগল্প, ৩৮টি নাটক, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র, ভ্রমণকাহিনি প্রভৃতি। সংগীত রচনা করেছেন প্রায় দুই হাজার। চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ‘নটীর পূজা’ ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেন। এছাড়াও অভিনয় করেছেন নাটক ও নৃত্যনাট্যে।
কলকাতার জোড়াসাঁকোয় জন্ম হলেও তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে শিলাইদহ ও বোলপুর শান্তিনিকেতনে। শিলাইদহে তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতেন। শান্তিনিকেতনে গড়ে তুলেছিলেন ব্রহ্মচর্য আশ্রম।
রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি ত্যাগ করেন নাইট উপাধি। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর লেখা গান জনগণমন এবং আমার সোনার বাংলা ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
আজো বাংলা সংস্কৃতির তিনি শেষ কথা। দুঃখে ও সুখে আমরা তাঁকে আঁকড়েই বাঁচি। তিনি আমাদের চিরসখা।
আজ তিনি নেই। সত্যিই কি তিনি নেই? জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে তিনি আছেন আমাদের প্রাণে, আমাদের উপলব্ধিতে।
আর কবিগুরুকে জন্মদিবসে শ্রদ্ধা জানালেন কবি অংশুমান চক্রবর্তী।
পড়ুন!
আজ পঁচিশ
অংশুমান চক্রবর্তী,
আজ সকাল থেকে মনটা ফুরফুরে
কী যে কারণ এর জানি না ঠিক,
ইচ্ছে করে তাঁর গানের সুরে সুরে
ভ্রমণ করি একা দিকবিদিক।
কোথায় যাবো সেটা বলাই মুশকিল
মনের ডানা শুধু চায় উড়ান,
প্রশ্ন করে শুধু মাথায় কিলবিল
চাতক পান করে কবির গান।
মনটা ফুরফুরে সকাল থেকে আজ
আড়ালে বসে পাখি দিচ্ছে শিস,
রুদ্র প্রকৃতির কৃষ্ণচূড়া সাজ
আজ তো বৈশাখ, আজ পঁচিশ …
পঁচিশে বৈশাখ
অংশুমান চক্রবর্তী,
কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া
রাঙা গাছের ডাল বালিকা দল যাবে কোথায়
নাচের রিহার্সাল।
খোঁপায় ফুল, রঙিন পাড়
দুধেল সাদা শাড়ি বক্ষে চেপে গীতবিতান
কে যায় তাড়াতাড়ি?
খয়েরি পাঞ্জাবি, ধুতি
সঞ্চয়িতা হাতে
কী পড়ছে নব্যযুবক
চিলেকোঠার ছাতে?
মালা গাঁথছে, তাই কিশোরীর
উধাও পেটের ক্ষুধা
পাঠ মুখস্থ করে নিচ্ছে
অমল এবং সুধা।
বাউল বাতাস কানের কাছে
দিয়েই গেল ডাক
দুচোখ মেলে দেখি দ্বারে
পঁচিশে বৈশাখ।
উৎসর্গ রবীন্দ্রনাথ
অংশুমান চক্রবর্তী,
আমি যদি তাকে নন্দিনী বলে ডাকি
সেও কি আমাকে রঞ্জন বলে ডাকবে?
‘আজি বরিষণ মুখরিত’ যদি গাই
সেও কি দুচোখে শ্রাবণ রাত্রি আঁকবে?
কৃষ্ণকলির রূপ কল্পনা করে
কপালে সে রোজ পরবে কৃষ্ণ টিপ?
কোনোদিন যদি বিমলার কথা বলি
সেও কি বলবে নিখিলেশ-সন্দীপ?
কথায় কথায় অমলের কথা এলে
তখন সেও কি তুলবে সুধার কথা?
নষ্টনীড়ের প্রসঙ্গ যদি ওঠে
সেও কি বলবে বৌঠান চারুলতা?
একান্তে যদি শেষের কবিতা পড়ি
সেও কি খুঁজবে অমিত-লাবণ্যকে?
হবে এইসব? তবে আমি প্রেম দেব
না হলে ভুলেও চোখ রাখবো না চোখে
নতুন বৌঠান (উৎসর্গ রবীন্দ্রনাথ)
অংশুমান চক্রবর্তী,
নতুন লেখা আমায় পড়ে শোনাতে হবে কাল
তেমন লেখো যেমন লেখেন ঠিক বিহারীলাল।
আমার বড়ো সন্দেহ হয়, খাতা ভরাও যতো
একটি লেখাও হবে না আর ভোরের পাখির মতো।
ঠাট্টা নয়, আচ্ছা তুমি চেষ্টা করো তবে
লিখতে যদি পারো, তোমার নেমন্তন্ন হবে।
তুমি নাকি অসাধারণ– বলেন জ্যোতিদাদা
চান না তিনি রুটিন দিয়ে তোমাকে হোক বাঁধা।
সে প্রশ্রয়ে তুমি ওড়াও আমার খাঁচার পাখি?
দুই বছরের বড়ো আমি, ভুলেই গেছ নাকি?
দেখতে তুমি একেবারে বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি
বন্ধ করো কথায় কথায় গুরুমশাইগিরি।
আমাকে ভুল বোঝা তোমার মস্তবড়ো ত্রুটি
জানে এসব? এতকিছু সহ্য করে ছুটি?
ব্যস্ত হয়ে পড়ছো এখন, পাও না অবসর
উদাস তোমার নতুন দাদা, খুব অপমানকর।
ঠাকুরবাড়ির কোলাহলে সবার মাঝে একা
বাঁশি শুনি, আগের মতো হয় না তেমন দেখা।
ভবিষ্যতে হবে তুমি অনেক বড়ো কবি
তখন আমি পটে লিখা, তখন আমি ছবি।
সত্যি বলো আমায় নিয়ে লিখবে তখন গান?
নয়ন মাঝে থাকবো তোমার নতুন বৌঠান।
পঁচিশে বৈশাখে
অংশুমান চক্রবর্তী,
বন্ধুরা সব অমল বলে স্কুলের সময় থেকে
দেখা হলে আসল নামে কেউ ওঠে না ডেকে।
মনে পড়ে ক্লাসের শেষে হতো রিহার্সাল
রঙিন হয়ে থাকতো তখন কৃষ্ণচূড়ার ডাল।
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় করেছি ‘ডাকঘর’
অনুষ্ঠানের দু’দিন আগে হঠাৎ এলো জ্বর।
বাবা বলেন, চিন্তা কিসের? সুস্থ হয়ে যাবি
স্কুলে তোকে নিয়ে যাবো ভেঙে ঘরের চাবি।
প্রথম আমার মঞ্চে ওঠা, একটু ছিল ভয়
বাংলার স্যার বলেছিলেন, ‘দারুণ অভিনয়’।
সেদিন থেকে বন্ধুরা সব অমল বলে ডাকে
আসল নামটা হারিয়ে গেছে পঁচিশে বৈশাখে।
Be the first to comment