দেশের যেকোনো শহরে লুকিয়ে আছে ‘আমার শহর’, দেখতে হলে আসুন ১ জুন অজিতেশ মঞ্চে

Spread the love

পিয়ালি আচার্য,

‘আমার শহর’; এটি একটি নাটক। ১ জুন দমদম অজিতেশ মঞ্চে মঞ্চস্থ হবে এই নাটকটি। নাটক ও নির্দেশনা শুভজিৎ বিশ্বাস। নাট্যজন গোষ্ঠীর নাটক এটি। কলকাতা তথা বাংলায় অনেক নাটকের দল আছে। টেলিভিশন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও তারা এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যান অন্তরের তাগিদে। এত নাটকের ভিতর হঠাৎ আমরা কেনোই বা ‘আমার শহর’-কে বেছে নিলাম? আসলে এর পিছনে যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি সেই শুভজিৎ বিশ্বাসের ত্যাগ, তিতিক্ষা, নাটকের প্রতি ভালোবাসা তাকে অনেক বাধা দূর করতে সাহায্য করেছে। আরেকজন মানুষের নাম উচ্চারণ না করলে ভুল হবে, তিনি হলেন দক্ষিন দমদম মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল প্রবীর পাল। তাঁর সহযোগিতাতেই নাট্য কর্মী হিসাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি; বলেন শুভজিৎ।

ছাত্রাবস্থা থেকেই নাটকের প্রতি টান। অবশ্য শুভজিৎ নিজেই স্বীকার করেন, এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসুকে ইমপ্রেস করতে ব্রাত্যর নাটক দেখতে যান তিনি। ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতি করেন শুভজিৎ। কখনও কলেজের কালচারাল সেক্রেটারি, কখনও জেনারেল সেক্রেটারি, কখনও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ সামলেছেন। সেটা ২০১৫ সাল। ব্রাত্য বসুর নাটক ‘সিনেমার মতো’ দেখতে যান শুভজিৎ। শুভজিৎ অকপটে বললেন নেতা তথা মন্ত্রীর মন জয় করার জন্য গিয়েছিলাম। যদিও ভিতরে ছিলো নাটকের প্রতি ক্ষিদে। সেটা যেন আরও বেশি করে চাগাড় দিয়ে উঠলো এই নাটক দেখার পর। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শুভজিৎ। তবে তার মধ্যেও হাওয়াইন গিটার, শ্রুতি নাটক, মাইম বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে দক্ষ ছিলেন।

থিয়েটার করবেন বলে কলেজে পড়ার পাশাপাশি লোকের বাড়িতে জল দেওয়ার কাজও করতেন শুভজিৎ। এইসময় হঠাৎই একটা সুযোগ এলো। নাট্য পরিচালক অভি চক্রবর্তী শুভজিৎকে অশোকনগর নাট্য সংস্থায় কোরাস টিমে অভিনয় করার সুযোগ দেন। ওডিশার কোরাপুটে গিয়ে নাট্যোৎসবে যোগদান করার সুযোগ মেলে। সত্যজিৎ রায়ের ‘বানর’ নাটকে ডঃ গুপ্তর চরিত্রে অভিনয় করে দক্ষতা দেখান তিনি। এইসময় শুভজিৎ মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরি নেন। সেখানে ম্যানেজার হিসাবে পান জয়ন্ত রায় বলে এক জনকে। শুভজিৎ জয়ন্ত রায়কে বুঝিয়ে হাবড়া, অশোকনগরের দিকে ওষুধ ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ নিতেন, যাতে নাটকে অভিনয় করা যায়। জয়ন্ত রায় অবশ্য জানতেন না শুভজিৎ নাটক করেন। পরে জানা যায় জয়ন্ত রায়ও একজন নাটকের অনুরাগী এবং নাট্যাভিনেতা। এইভাবেই এগচ্ছিলো। কখনও ব্রাত্য বসুর লেখা নাটকে অভিনয়, কখনও পঞ্চায়েত ভোটের আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, কেশপুর, ঝাড়গ্রামে গিয়ে পথনাটিকা করা। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো শুভজিতের নাট্য পথের যাত্রা।

দমদমে একসময় ‘নব নাট্যম’ বলে নামকরা নাট্য সংস্থা ছিল। কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে এই নাট্য সংস্থা। সেখান থেকে পবিত্র রায়চৌধুরীর মতো প্রাজ্ঞ এবং দক্ষ গণনাট্যের মানুষজনকে নিয়ে তৈরি হয় শুভজিতের নতুন নাটকের দল ‘নাট্যজন’। ২০১৭ সালে কালী পুজোর পর নভেম্বর মাসে হয় প্রথম নাটক ‘গুলশান’। এর পাশাপাশি বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র শুভজিৎ বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কলেজে পরিবেশন করেন নাটক ‘বিদ্যাসাগর’। এই ভাবেই নাটকের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। নাটকই তখন তাঁর ধ্যান, জ্ঞান, ভালোবাসা। তৈরি করেন ‘আমার শহর’। মুখ্য চরিত্র হলো একজন কলেজ পড়ুয়া, কলেজের কালচারাল সেক্রেটারি। চরিত্রটির নাম জয়দীপ পাল। প্রতিবাদী জয়দীপ যেন আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজ তথাকথিত রাজনীতির নামে দুর্নীতি, রক্ষক পুলিশের ভন্ডামিকে বেআব্রু করে দেয়। রেলের জমিতে একটি আবাসন ভেঙে পড়ে; এইভাবেই গল্পটি শুরু হয়।

এখানে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। তারা পাবলিসিটি থাকলে আন্দোলনের পাশে থাকেন, নাহলে তাদের পাশে পাওয়া যায় না। এখানে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়। গেরুয়া, সবুজ বা নীল যেকোনো দলেই যে স্বার্থান্বেষী মানুষরা থাকেন তাদেরই মুখোশ টেনে খুলে দেওয়া হয়েছে। এখানে পুলিশের ভূমিকার যেমন সমালোচনা করা হয়েছে তেমনই ভালো পুলিশও যে এখন আছেন সেকথাও বলা হয়েছে। মিডিয়া তার টিআরপির জন্য কী করে সেকথাও দেখানো আছে। সবমিলিয়ে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার থেকে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন তাই শুভজিৎ ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর এই নাটকে। কোনও বাস্তব ঘটনার সঙ্গে এই নাটকের গল্প বা চরিত্রের কোনও মিল নেই। আর যদিও বা থাকে তা কাকতালীয়।

রাজনীতি এবং নাটক এই দুই আঙিনায় নিজেকে এতটাই ব্যস্ত রেখেছেন শুভজিৎ যে ‘আমার শহর’ নাটকে অভিনয় তিনি করছেন না। এই যে এত কর্মকাণ্ড তার নায়ক শুভজিতের বয়স কিন্তু মাত্র ২৭। ব্রাত্য বসুর ‘সিনেমার মতো’ দেখে নাট্যজগতে ঝাঁপিয়ে পড়া শুভজিৎ বলেন এখনও আমি আমার নাট্য গুরু ব্রাত্য বসুর প্রশংসা শুনলে মনে করি আমার কাজ সার্থক হয়েছে। ১ জুন ‘আমার শহর’ মঞ্চস্থ হওয়ার আগে চলছে পুরোদমে রিহার্সাল। মানুষ আসুন, দেখুন এবং মতামত দিন, ভুল হলে সমালোচনা করুন এবং ভালো লাগলে প্রশংসা করুন; এটাই চান শুভজিৎ।

দেখুন ছবি-

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*