পিয়ালী আচার্যঃ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে উপস্থিত হওয়া কালো মাথার ভিড় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি দিশা দেখান তা জানার জন্য। নির্দিষ্ট সময়েই এলেন তিনি। তারপর আম্বেদকরের মৃত্যুদিবস উপলক্ষ্যে তার ছবিতে মালা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মেয়ো রোডে যে বক্তব্য তিনি পেশ করলেন –
· দাঙ্গার থেকে বড় শত্রু দেশে আর কিছুই নেই।
২৫ বছরে ধরে আমরা এই দিনটি পালন করে আসছি। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর সেই বিভৎস দিনটির কথা আমরা কেউ ভুলে যাইনি। সেদিন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। সরকারীর কেউ রাইটার্স থেকে বেরোতে পারছিলেন না। আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। গার্ডেন রিচ, মেটিয়াব্রুজ, পার্ক সার্কাস, শিয়ালদাহ এমনকি রাইটার্স পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিলাম। শিয়ালদাহ যখন গিয়েছিলাম তখন দেখা হয় মাদার টেরিজার সাথে। দেশগুড়ে দাঙ্গার ভয়াবহ চেহারা সেদিন দেখেছিলাম। সেইদিন থেকেই অঙ্গীকার নিই দাঙ্গা করতে দেবো না।দাঙ্গার থেকে বড় শত্রু দেশে আর কিছুই নেই।
· বাচ্চাকে মিছিলে আনবেন না, ওকে পড়াশোনা করতে দিন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য পেশের মাঝখানে হঠাৎই থেমে যান। ভীড়ের জটলার মাঝে একটি বাচ্চাকে দেখতে পেয়ে স্পষ্ট বলেন বাচ্চাকে কেউ মিছিলে নিয়ে আসে। এটাকি বিরাট কৃতিত্ব। ওকে পড়াশোনা করতে দিন, বাচ্চাকে মিছিলে আনবেন না।
· সরকারের কর্মসূচী ধর্ম নিয়ে হতে পারে না, সরকারের কর্মসূচী মানুষকে নিয়ে হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারকে অসহিষ্ণু বলে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভারতের মানুষ তার অহংকার। এতো ভাষা, এত ছন্দ, এত কথা আর কোথাও দেখতে পাবেন না। অথচ বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের যে দেশ তা অসহিষ্ণু হয়ে গেলো। আমি হিন্দু ধর্ম বলে খ্রীষ্টান, মুসলিম, শিখদের ঘৃণা করবো তা কখনো হয় না। আমাদের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। তাহলে তো সংবিধানই বদল করতে হয়।
· সাংবাদিক হত্যার তীব্র নিন্দা
ব্যাঙ্গালোরের সাংবাদিক হত্যা থেকে শুরু করে সারা দেশজুড়ে সাংবাদিকদের আক্রমণ নেমে আসছে। কে অধিকার দিয়েছে এসব করার।
· আমাদের সঙ্গে উন্নয়নের প্রতিযোগিতা করুন
মমতা এদিন যে উন্নয়নের ডানায় ভর করে তিনি বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৬র নির্বাচন জেতেন সেই উন্নয়নই যে তাঁর সরকারের যে মূল ভিত্তি তা বারবার বুঝিয়ে দেন। বলেন উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় আসুন আমি চ্যালেঞ্জ করছি।
· আমি মুসলিম তোষন করি না আমি সবাইকে সমান চোখে দেখি
অনেকে আমার সমালোচনা করে বলেন আমি মুসলিম তোষন করি আরো একবার ধর্মতলার মঞ্চে বলেন মমতা ব্যানার্জী। বলেন আমার রাজ্যে ৩১% মুসলিম ভাইবোন আছে তাদের রক্ষা করা আমাদের কাজ। তাতে যদি বলি তোষণ করছি হাজারবার করবো। সব ধর্মকে আমি ভালোবাসি। যতক্ষণ জীবন থাকবে ততক্ষণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, একতা, সংহতির জন্য লড়াই করে যাবো।
· তৃণমূলের কোনো সদস্য অন্যায় করলে তারও সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি হয়
সিপিএম-এর লক্ষণ শেঠ, সুশান্ত ঘোষেরা কুকীর্তির নায়ক হওয়া সত্ত্বেও বামফ্রন্ট সরকার তাদের গ্রেপ্তার করেনি। কৈলাস বিজয়বর্গীয় কি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন? কিন্তু বাংলায় আমরা যেই অন্যায় অপরাধ করুক, অন্যায় করুক তাকে শাস্তি দিই। তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো সদস্য অন্যায় করলেও তাকে সমান শাস্তি দেওয়া হয়।
· আমাদের সংস্কৃতি রবীন্দ্র নজরুকের সংস্কৃতি
কে কি খাবে কে কি পড়বে তা সরকার বা শাসক দল ঠিক করে দিতে পারেন না। মনে রাখবেন আমাদের সংস্কৃতি রবীন্দ্র, নজরুল, গান্ধীজি, নেতাজী, চৈতন্য, বুদ্ধের সংস্কৃতি।
· ২৫ ডিসেম্বর ও ২৩ জানুয়ারী ঘোষণা করা হোক জাতীয় ছুটি
যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন একটি মহান দিন, ঐদিন অবশ্যই আগের মতো জাতীয় ছুটি দেওয়া হোক দাবী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি বলেন গান্ধীজি যদি জাতির পিতা হন তাহলে নেতাজী জাতির নেতা। সুতরাং তাঁর জন্মদিনেও ছুটি দেওয়া উচিত।
· বিজেপি তথা কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে শানিত আক্রমণ
নরেন্দ্র মোদির নাম না করে মমতা ব্যানার্জী বলেন তিনি কি দেশ চালানোর আদৌ যোগ্য। চেয়ারকে ফেয়ার করতে বেশি উদ্যোগী তিনি। আর কেন্দ্র সরকারের কেউ বিরোধীতা করলেই তার বিরুদ্ধে এজেন্সি লাগানো হয়। আমাদের মত গরীব দলেরও রোজ একটা করে আই.টির চিঠি আসে। কেউ কথা বললেই জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
· মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠ রোধ করার ক্ষমতা কারোর নেই
নেত্রী আজ রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলেন, “কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে বাঁশি সঙ্গীত ধারা……তুমি কি বেসেছ ভালো” জোর গলায় বলেন মমতা ব্যানার্জীকে প্রাণে মেরে দেওয়ার কথা বলে। মনে রাখবেন আমার যতদিন গলার আওয়াজ বেরোবে আমার কন্ঠ রোধ করার ক্ষমতা কারোর নেই।
· বাংলা ডিভাইড এন্ড রুল পছন্দ করে না
মমতা ব্যানার্জী বলেন হঠাৎ করে কিছু নেতা গজিয়েছে যারা বলছে বাংলাকে নতুন করে গড়বে পথ দেখাবে। ওরা জানেনা বাংলা ডিভাইড এন্ড রুল পছন্দ করে না। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করে গান লিখেছিলেন “বাংলার মাটি, বাংলার জল…… এক হউক”। গান্ধীজিও তখন বেলেঘাটায় অনশন করেছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “জীবন যখন………করুণা ধারায় এসো”। ইকবালকে উদ্ধৃত করে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে নেত্রী বলেন তোমাদের লোকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, কিন্তু যেদিন মানুষ বুঝবে সেদিন তোমাদের চলে যেতে হবে। আক্ষেপের কোনো সুযোগ থাকবে না।
· জিডি বিড়লার ঘটনার নিন্দা
জিডি বিড়লার ঘটনার নিন্দা করে মমতা বললেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তা বলে ঘোলা জলে মাছ ধরা ঠিক নয়। স্কুল বন্ধ করাও উচিত নয়।
· ওদের পলিটিক্যালি জিরো করে দিন
বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে বাংলার অগ্নিকন্যা বলেন কেউ কেউ টাকা পয়সা ছড়িয়ে গন্ডগোল করার চেষ্টা চলছে। তৈরী থাকুন, নজর রাখুন। মনে রাখবেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে একমাত্র জোড়া ফুল, ঘাস ফুল, তৃণমূল। মানুষও তাই ভাবেন। ওদের গণতান্ত্রিক উপায় রাজনৈতিক উপায়ে শূণ্য করে দিন।
ছবিঃ শুভেন্দু দাস
Be the first to comment