একাধিক মতবিরোধ, রাজনৈতিক আদর্শের টানাপোড়েনের মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে তাঁর ৷
রাতারাতি নোট বাতিলের সাক্ষী হয়েছিল দেশ। বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর হলেও মোদীর এই পদক্ষেপ তৎকালীন সময়ে সাহসী হিসেবও তকমা পেয়েছিলো। কিন্তু অর্থনীতিবিদ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সেই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। নোবেল পাওয়ার পর অভিজিৎ বলেন, ভারতের অর্থনীতির অবস্থা নড়বড়ে। এখনকার বৃদ্ধির হারের তথ্য দেখে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতি কবে ঘুরে দাঁড়াবে তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারা যাচ্ছে না ৷
অভিজিতের বক্তব্য, গত পাঁচ-ছয় বছরে কিছুটা আর্থিক বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছিল ৷ কিন্তু, সেই নিশ্চয়তা এখন চলে গেছে ৷ সময় যত এগিয়েছে অভিজিতের ভাবনার সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে কেন্দ্রের ৷ নোবেল পাওয়ার পরও পরিস্থিতি বদলায়নি ৷ গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির গতি অনেকটা ধীর হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি আর্থিক বছরের শুরুতেই দেশের GDP তথা আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ ৷ যা গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন ৷ এ বিষয়ে অভিজিৎ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দেশে একটি অর্থনৈতিক ঘাটতি তৈরি করেছে ৷ সেটি সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে ৷ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা এবং আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা ধরে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার , এটিই প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে ৷ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ৷ আর্থিক চাহিদাই দেশের অর্থনীতির এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা ৷ ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কী, সে বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না ৷ কিন্তু ভারতের বর্তমান অর্থনীতি যে দুর্বল তা স্পষ্ট ৷
এমনকি নোবেল পাওয়ার দিন প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা নিয়েও চাপান-উতোর শুরু হয় রাজনৈতিক মহলের একাংশে ৷ নোবেল পাওয়ার খবর পেতেই সোশাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা বার্তার ঝড় বয়ে যায় ৷ রাহুল গান্ধী, মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই শুভেচ্ছা পাঠান ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে গিয়ে অভিজিতের মায়ের সঙ্গে দেখাও করেন ৷ ফুল ও মিষ্টি পাঠান ৷
কিন্তু বরাবর সোশাল মিডিয়ায় যিনি সবথেকে বেশি সক্রিয় , সেই নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা বার্তা আসে চার ঘণ্টা পর ৷ কেন এত বিলম্ব? এতে কি কোনও রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল না অমর্ত্য সেনের মতো অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি সরকার ৷ এমনই নানা গুঞ্জন উঠতে শুরু করে ৷
তবে সমস্ত জল্পনা কাটিয়ে শেষমেশ প্রধানমন্ত্রী-নোবেলজয়ীর সাক্ষাৎ হতে চলেছে ৷ আজ দিল্লি পৌঁছেছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও ঘুরে গেলেন প্রাক্তনী ৷ ২১ অক্টোবর দিল্লির একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি ৷ তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ যে তাৎপর্যপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ দিল্লি থেকে কলকাতা যাওয়ার কথা ৷ প্রাথমিকভাবে যে সূচি জানা গেছে, তাতে খুব সম্ভবত ২২ অক্টোবর অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লি থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
Be the first to comment