হিটলার-মুসোলিনির আমলেও এমন হতো না, কান্নায় ভেঙে পড়লেন সন্ময়

Spread the love

চারদিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পেলেন কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভেঙে পড়লেন কান্নায়। পুলিশ থার্ড ডিগ্রি প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগও তোলেন। বলেন, আমার পরিবারকে বলাই হয়নি আমি কোথায়। আমাকে কী জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটাও বলা হয়নি। ব্যারাকপুর কমিশনারেটকে দিয়ে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) যা করিয়েছেন তা আমি ভাষায় বিশ্লেষণ করতে পারব না। সেদিন যেভাবে আমাকে মেরেছে, আমার নিম্নাঙ্গে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে তাতে আমি প্রাণেই মারা যেতাম। মাটিতে ফেলে ঘুষি, লাথি, কিল, চড় মেরে ৯ ঘণ্টা ফেলে রেখেছিলো।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আগরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় এই কংগ্রেস নেতাকে। তবে তাঁকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে তা কেউ জানতেন সেসময়ে। গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তাঁকে ওইদিন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। তারপর থেকে ঠিক কী হয়েছিল, অধরা ছিল সবটাই। একাধিকবার সন্ময়বাবুর পরিবার থানায় গেলে উল্টে পুলিশ তাঁদের সঙ্গেই অভব্য আচরণ করে বলে অভিযোগ। তাঁদের বাড়ি গিয়ে তিনটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি সন্ময়বাবুর স্ত্রীর সঙ্গেও অশ্লীল ভাষায় পুলিশ কথা বলেছে বলে অভিযোগ ওঠে। নাগরিক অধিকার মঞ্চ, বাম -কংগ্রেস নেতারা তাঁর গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হন ৷

অবশেষে রবিবার জামিন পান তিনি। ছাড়া পেয়েই এই তিনদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতেই চোখে-মুখে ফুটে উঠছিল ভয়, আতঙ্ক। বারবার অঝোরে কেঁদে ফেলছিলেন তিনি। চোখ মুছতে মুছতেই বললেন, হিটলার, মুসোলিনির আমলেও এরকম হত না যা পিসি-ভাইপোর আমলে হচ্ছে। জঙ্গলের রাজত্ব চলছে দেখলেন তো। আমি যদি ভুল করে থাকি আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হোক। আমার পরিবারকে বলাই হয়নি আমি কোথায়। ৪১ A ধারার কোনও নোটিশও দেয়নি। আমাকে কী জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা কিছুতেই বলা হয়নি। আমি বর্তমান অগণতান্ত্রিক অবস্থার কথা লিখেছি, বহুদিন ধরে লিখি। আমাকে ভাইপো বাহিনী শাসিয়েছিল একাধিকবার। আমি ভাবতে পারিনি এভাবে পুলিশকে লেলিয়ে দেবে। আমি মানবাধিকার কমিশনে যাব।

কথায় কথায় বারবার ধরা পড়ছিলো কৃতজ্ঞতার অভিব্যক্তি। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে অরুণাভ ঘোষ, অধীর থেকে সোমেন সকলেরই নাম নিয়েই ধন্যবাদ জানালেন তিনি। জানালেন, এসব মানুষের সাহায্য ছাড়া আজ তিনি সকলের সামনে আসতেই পারতেন না। তাঁর কথায়, ওঁরা না থাকলে তো আমার প্রাণটাই থাকত না। এর পাশাপাশি তিনি আগামীদিনে ফের হামলারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সোশাল মিডিয়ার সাহায্যে সরকারি ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার আগরপাড়া থেকে গ্রেফতার হন তিনি। 18 তারিখ পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয় তাঁকে। পুলিশ তদন্তের স্বার্থে সাতদিনের হেফাজতের আবেদন জানানো হলেও আদালত দু’দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন। রবিবার পুনরায় তাঁকে আদালতে তোলা হলে শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করে বিচারক। আগামী ২০ নভেম্বর আবার আদালতে পেশ করা হবে তাঁকে। তবে জামিনে থাকাকালীন পুরুলিয়া মফস্বল থানায় সপ্তাহে একদিন হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সন্ময়বাবুকে।

সন্ময়বাবু জামিন পাওয়ার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, সত্যের জয় হল। পুরুলিয়া কোর্টের মাননীয় বিচারক কংগ্রেসের মুখপাত্র সন্ময় ব্যানার্জির জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা প্রথম থেকেই আদালতের উপর ভরসা রেখেছিলাম। সন্ময়ের উপর যেভাবে পুলিশের সঙ্গে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করেছিলো তার বিরুদ্ধে আইনের পথে দল লড়বে ৷ এর সঙ্গেই রাজ্য সরকারের হাতে গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে একসঙ্গে সারা রাজ্যে পথে নেমে লড়াই হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*