মঙ্গলবারই সাগরদিঘি ফেরার কথা ছিল তাঁদের ৷ কিন্তু গাড়ি না পাওয়ায় হয়ে ওঠেনি ৷ বুধবার কাশ্মীর থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন রফিকুল, নইমুদ্দিন, কামারুদ্দিন, রফিক ও মুরসালিম ৷ বাড়ি ফেরার জন্য সব গোছগাছ করে রেখেছিলেন ৷ পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু কেনাকাটাও করেছিলেন ৷ বাড়ির লোক প্রিয়জনদের আসার অপেক্ষায় ছিলেন ৷ কিন্তু, কাশ্মীর থেকে একটা ফোন কল সব বদলে দিল ৷ বাড়ির লোকজন জানতে পারলেন, আর ফিরে আসবে না রফিকুল, কামারুদ্দিনরা ৷ স্থানীয় পুলিশকর্মীরা বাড়ি এসে জানান, জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে মুরসালিমদের ৷ তারপর থেকে শোকস্তব্ধ গোটা সাগরদিঘি ৷
কাজের সূত্রে প্রায় এক মাস আগে দক্ষিণ কাশ্মীরে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির পাঁচজন বাসিন্দা ৷ তাঁরা রফিকুল শেখ (২২), কামারুদ্দিন শেখ (৩৪), নইমুদ্দিন শেখ (৩২), রফিক শেখ (৫১) ও মুরসালিম শেখ (৩৬) ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, কাশ্মীরের কুলগামে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন পাঁচজন। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা নিজেদের বাড়িতেই ছিলেন তাঁরা ৷ সেসময় তাঁদের উপর হামলা করে জঙ্গিরা ৷ দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে বের করে এনে গুলি চালাতে শুরু করে ৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের ৷ গুরুতর জখম হন জহিরুদ্দিন ৷ তাঁকে অনন্তনাগের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷
মৃত রফিকুল শেখের মা মুনজরা বিবি বলেন, গতরাতে পুলিশ এসে আমাকে ঘুম থেকে তোলে ৷ জানায়, আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে ৷ আমার ছেলে ওখানে ধান কাটার কাজ করত, শ্রমিকের কাজ করত, আপেল পাড়ার কাজ করত ৷
মৃত রফিকের বিবি সমিরুন বিবি বলেন, আজ ওদের সবার ফেরার কথা ছিল ৷ হঠাৎ পুলিশ এসে জানাল, রফিক আর নেই ৷ জঙ্গিদের গুলিতে মারা গেছে ৷ ১০-১২ বছর ধরে যাওয়া আসা করে ৷ ওখানে সবরকম কাজ করত ৷
কান্না ভেজানো গলায় নইমুদ্দিনের বিবি আবিদা বিবি বলেন, ২৮ দিন আগেই কাজে গিয়েছিল ৷ ওখানে ঠান্ডা খুব থাকায় ওরা আজ চলে আসত ৷ গতকাল সারাদিন কাজ করার পর নিজেরা রান্না করে খেতে বসেছিল ৷ কিন্তু খাবার থালা ফেলে ওদের বাইরে বের করে মেরে ফেলেছে জঙ্গিরা ৷ ওখানকার লোকজন ফোন করে আমাদের খবর দেয় ৷
মৃত মুরসালিমের বিবি সাইরা বিবি বলেন, চারদিন আগে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল ৷ গতকাল রাতে খবর পাই, মুর্শিদাবাদের পাঁচজনকে কাশ্মীরে জঙ্গিরা গুলি করে মেরেছে ৷ পরে সাগরদিঘি থানা থেকে জানানো হয় মুরসালিম মারা গেছে ৷
মৃত কামারুদ্দিনের বিবি বলেন, আমার বড় মেয়ের অসুখ ৷ তার জন্য টাকার দরকার ৷ তাই কাশ্মীরে কাজের জন্য গিয়েছিল ৷ পুলিশ কাল এসে জানাল কামারুদ্দিন আর নেই ৷ জঙ্গিদের গুলিতে মারা গেছে ৷ এখন আমাদের কী হবে? বড় মেয়ের অপারেশনের জন্য টাকা দরকার ৷
Be the first to comment