মাঝেরহাট ব্রিজ নিয়ে এবার রেলের পালটা চিঠি । রেল মন্ত্রকের তরফে দেওয়া সেই চিঠি পৌঁছেছে নবান্নে । সূত্র জানাচ্ছে, সেখানে রাজ্যের তরফে ঢিলেমির অভিযোগ আনা হয়েছে । রাজ্যের কাছে বারবার বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল রেল । সেই তথ্য দিতে ঢিলেমি করেছে নবান্ন । এমনটাই অভিযোগ ।
সূত্র জানাচ্ছে, রেলের তরফে ব্রিজের নকশা নিয়ে বেশ কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল । পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয়েছিল, ব্রিজের ইরেকশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম নিয়েও । বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল রেলের তরফে । রাজ্যের তরফে উত্তর দিতে ঢিলেমি করা হয়েছে ।
লক্ষ্য ছিল সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি । নবান্নের তরফে চেষ্টা চলছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সেই কাজ শেষ করার । কিন্তু সে বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা নেই । কারণ রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের ছাড়পত্র এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । নবান্নের দাবি তেমনটাই । আর সেই সূত্রে রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । চিঠি দেন পীযূষ গোয়েলকে ।
হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট ব্রিজ । ঘটনায় মৃত্যু হয় 3 জনের । আহত হন 25 জন । ঘটনার পর রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ভেঙে ফেলা হবে পুরোনো সেতু । সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, 1 বছরের মধ্যে তৈরি করা হবে নতুন সেতু । সেই একটা বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মাঝেরহাট সেতু তৈরি হয়নি । আজও নিত্যসঙ্গী যানজট । ব্রিজের কাজ শেষ হবে কবে? জানেন না কেউই।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মত বিশেষজ্ঞদল মাঝেরহাট সেতু পরিদর্শন করে । তারপর তৈরি হয় পরিকল্পনা । ডাকা হয় বরাত । গত বছর নভেম্বর মাসে ব্রিজটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয় । নতুন ব্রিজ তৈরিতে নামে বিশেষজ্ঞ সংস্থা । কিন্তু সেই কাজ এখনও পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি । কিন্তু কেন? ব্রিজের যে অংশগুলো পূর্ত দপ্তরের অধীন সেগুলির কাজ চলছে দ্রুত গতিতে । অন্তত রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের দাবি তেমনটাই । রেলের অংশের জন্যই থমকে রয়েছে কাজের ভবিষ্যৎ ।
পূর্ত দপ্তরের সূত্রে খবর, ব্রিজ তৈরির জন্য রেলের অনুমোদন লাগবে । কারণ শিয়ালদা রেল লাইনের উপর দিয়ে এই সেতুর একটা বড় অংশ রয়েছে । নিয়ম মোতাবেক রেললাইনের উপর দিয়ে সেতু তৈরি করতে হলে রেলের অনুমোদন পেতে হয় । রেলের তরফে সেই অনুমোদন এখনও দেওয়া হয়নি বলে দাবি রেল কর্তৃপক্ষের । রেল সূত্রে জানা গেছে, ব্রিজের নকশা মাস দেড়েক আগে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে । বিষয়টি পর্যালোচনা করছে রেলওয়ে সুরক্ষা কমিটি । নিরাপত্তার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে তবেই এই নকশায় অনুমোদন দেওয়া হবে ।
ব্রিজের কাজ পিছিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের বক্তব্য, “এটা প্রসিডিওরাল ডিলে । কারণ সবকিছু খতিয়ে দেখে তবেই ব্রিজের নকশা তৈরি করা হয়েছে । প্রস্তাবিত ব্রিজের নকশা তৈরি করেছে লি অ্যাসোসিয়েটস (Lee Associates) নামে দিল্লির একটি সংস্থা ।” এদিকে সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের বক্তব্য ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ হতে হতে ২০২০ সালের মার্চ হয়ে যাবে ।
মমতা চিঠিতে লেখেন, গঙ্গাসাগর মেলার জাতীয় গুরুত্ব রয়েছে । গঙ্গাসাগর যাবার পথে এই ব্রিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকার চাইছে গঙ্গাসাগর মেলার আগেই এই ব্রিজের কাজ শেষ করতে । তাই পীযূষ গোয়েলকে হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি । সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রেলের তরফে পালটা চিঠি দিয়ে দায় ঠেলে দেওয়া হল নবান্নের ঘাড়েই ।
Be the first to comment