গত কয়েকদিন আগেই রাজ্যের উপর দিয়ে বয়ে যায় বিধ্বংসী সাইক্লোন বুলবুল। যার জেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রবল হাওয়া, সঙ্গে ভারী বৃষ্টি। মাঠেই পচে যায় ফসল। এই অবস্থায়= কার্যত মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার জোগাড় বাংলার চাষীদের। এই অবস্থায় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে দাঁড়াল মমতা সরকার। ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের। ন্যূনতম এক হাজার টাকা অবধি সাহায্য দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে কৃষি দফতর।
জারি করা নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, যে মৌজায় ৩৩ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, সেখানেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। উত্তর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়া ও হুগলি জেলায় বুলবুলে ক্ষয়ক্ষতির জন্য চাষিদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কোন ধরনের শস্যে কী হারে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেচসেবিত ফসলের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে সাহায্য মিলবে। বৃষ্টির জলে চাষ হলে হেক্টর প্রতি ৬৮০০ টাকা হারে আর্থিক সাহায্য মিলবে।
কোনও চাষে একাধিক মরশুমে ফলন হলে হেক্টর প্রতি ১৮ হাজার টাকা হারে সাহায্য দেবে সরকার। ঘূর্ণিঝড়ে ধান চাষের সঙ্গে পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। পান বরজে একাধিক মরশুমে ফলন হয়ে থাকে। মাঠের ফসলের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সাহায্য এক হাজার টাকা থাকলেও একাধিক ফলন হয় এমন চাষে সবথেকে কম দুই হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি ক্ষতি হওয়া কৃষকরা।
জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের টাকা দেওয়া নিয়ে যাতে কোনও দুর্নীতি না তৈরি হয় সেদিকেও নজর থাকবে প্রশাসনের। জানা যাচ্ছে সরকারি সাহায্যের টাকা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এনইএফটি বা আরটিজিএস করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্য সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হবে। অবশ্য প্রত্যেক সাহায্যপ্রাপককে কৃষি দপ্তরের তরফে চিঠি দেওয়া হবে। ওয়েবেল এই চিঠি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠিয়ে দেবে। জেলার কৃষি দপ্তরের অফিস থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত চাষির কাছে চিঠি পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এই অনুদান সহজে মিলবে না। আর্থিক সাহায্য পেতে নির্দিষ্ট ফর্মে ব্লকের কৃষি দপ্তরের সহ অধিকর্তার অফিসে আবেদন করতে হবে। জমির পরচা, আধার, ভোটার সচিত্র পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে হবে। কৃষি দপ্তর আবেদনকারীর তথ্যগুলি যাচাই করবে।
তারপর ওই মৌজায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এবং চাষির জমির পরিমাণের ভিত্তিতে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। সব কিছু যাচাই করার পর ব্লক অফিস থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত চাষিদের তালিকা ও সাহায্যর পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য দপ্তরের জেলা অফিসে পাঠানো হবে। জেলা অফিস থেকে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাপকদের তালিকা ব্যাঙ্কে পাঠানো হবে। ব্যাঙ্ক ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে। এবার ব্লক পর্যায়ে অনুষ্ঠান করে চাষিদের হাতে চেক তুলে দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। তবে সাহায্যপ্রাপ্তির চিঠি এভাবে দেওয়া হতে হবে।
Be the first to comment