কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বসার জায়গা পান নি। রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীপ ধনকড়কে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ উচ্চপদস্থ কোনও আধিকারিকই। এমন অভিযোগের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাজনীতিকরণ না করার আবেদন জানান রাজ্য সরকারের কাছে। এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে বললেন, একটা বিশৃঙ্খলা অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনেট বৈঠক স্থগিত থাকার বার্তা পেয়েও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি পরিদর্শন করতে আসেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। কিন্তু, কর্তৃপক্ষহীন ফাঁকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেই চলে যেতে হয় তাঁকে। তাঁর বক্তব্য, তিনি উপাচার্যকে আসার কথা জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও উপাচার্যের দেখা মেলেনি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এতো জানানোর দরকার কী? অনেক কাজ আছে তো ওনার। আমি তো বুঝতে পারছি না ওনার এতো ঠিক করবার দরকার হল কেন? জাতীয় শিক্ষানীতির যে খসড়া উনি গিয়ে গিয়ে তা কিন্তু এখানে লাগাতে পারবেন না। বাংলার মাটি ওনাকে চিনতে হবে। কখনও বোটানিক্যাল গার্ডেন চলে যাচ্ছেন পেট্রোল গাড়ি নিয়ে। উনি রাজ্যপাল বলে ছাড় পেলেন। অন্য কেউ হলে কী ছাড় পেত? পরিবেশ দূষণের জন্য তো ধরতো। উনি কেন এটা করছেন জানি না। আমাদের শিক্ষার কী আছে না আছে, আমাদের মাথা উঁচু। উঁচু বলেই আমাদের রাজ্যের মেধা স্বীকৃত হয় সারা বিশ্বে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে। উনি এসে আমার শিক্ষা ঠিক করবেন? আপনার কি এমন দরকার পড়লো যখন বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে জানিয়েছে যে, আমাদের সেনেট বৈঠক হচ্ছে না। ওনার গায়ের জোরে যাওয়ার দরকার কী পড়লো? এর থেকে কী তাঁর উদ্দেশ্যটা বোঝা যায় না? উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট।
পার্থবাবু আরও বলেন, যাদবপুরেও একই জিনিস করেছেন। সব জায়গায় করছেন। ওনার বোঝা উচিত একটা এগজিকিউটিভ অথরিটি, একটা কন্সটিটিউশনাল অথরিটি। এগজিকিউটিভ অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করে কন্সটিটিউশনাল অথরিটি যদি বার বার যায় তাহলে সংবিধানের পবিত্রতাই তো নষ্ট হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় যাওয়ার কথা রাজ্যপালের। বিধানসভা ঘুরে দেখবেন তিনি। সেবিষয়ে গতকালই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। আর রাজ্যপালের বিধানসভা পরিদর্শনে যাওয়া নিয়েও তাঁকে কটাক্ষ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেন, হঠাৎ বলছেন বিধানসভায় যাব স্থাপত্য দেখতে, লাইব্রেরি দেখতে। এই সব হাস্যকর যুক্তি দিয়ে মানুষ চিনতে পেরে যাচ্ছে যে, এর আসল উদ্দেশ্যটা কী। আমি যথেষ্ট সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি রাজ্যপালের পদটাকে। উনি কেন অযথা নিজের সম্মান নষ্ট করছেন এবং কেন এই পদটার অপব্যবহার করছেন? উনি বিধানসভায় স্থাপত্য দেখেন না কি? তাহলে যান না ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে গিয়ে স্থাপত্য দেখুন। হঠাৎ বিধানসভার স্থাপত্য কেন? আসল কথা অন্য। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। আমি ওনাকে কর জোড়ে অনুরোধ করব, আপনি সাংবিধানিক প্রধান। সংবিধানের মর্যাদা জ্ঞান বলে বুঝেছি, আপনি বারবার বলছেন। কিন্তু, প্রতি পদক্ষেপে আপনার কার্যকলাপ অসাংবিধানিক। আমি ওনাকে অনুরোধ করব, যদি ওনার মনে হয় যে, কোথাও উপদেশ দেওয়া দরকার, উনি ডাকবেন। আমরা নিশ্চয়ই শুনব। কিন্তু, উনি নিজেই উপদেশ দেওয়ার জন্য চেয়ার-টেবিল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন একটা জায়গায়, অভিযোগ করবেন চা পাচ্ছি না, রাজ্যপালকে এরকম দেখে তো আমারই কষ্ট হয়। নিজের সন্মান এবং রাজ্যপালের সন্মান একসঙ্গে রাখলে অনেক ভালো হতো বলে আমার মনে হয়।
Be the first to comment