NRC, CAA-র বিরুদ্ধে এবার নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জানিয়ে দিলেন এর শেষ দেখেই ছাড়বেন ৷ NRC, CAA বন্ধ না করা পর্যন্ত এই লড়াই চলছে, চলবেও ৷ এমন আইন করতে হলে তাঁর দেহের উপর দিয়ে তা করতে হবে ৷ কিন্তু, তিনি তাঁর লড়াই থামাবেন না ৷ তৃণমূলের দাবি, আজকের মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পা মিলিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ ৷ চোখে পড়েছে শুধু জনজোয়ার ৷ NRC, CAA-র বিরুদ্ধে স্লোগান, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মমতার সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়েছেন দলীয় কর্মীরা ৷ তবে, এই লড়াই শান্তিপূর্ণভাবে করতে হবে ৷
তবে এদিন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরো দেশের সঙ্গে সাফল্য, শান্তির সঙ্গে কাজ করার বার্তা দেন ৷ চারিদিকে আগুন না জ্বালানোর অনুরোধ করেন ৷ এসবের কারণে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে ৷ বেশিরভাগ ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার ৷ মমতার স্পষ্ট বার্তা, আন্দোলন করুন, প্রতিবাদ চলুক, কিন্তু, সব কিছুই হবে শান্তিপূর্ণ ভাবে, গণতান্ত্রিক পথে ।
এ রাজ্যে কোনও মতেই NRC, CAA হবে না ৷ বারবার কথার মধ্যে দিয়ে সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷ শুধু বাংলায় নয়, দিল্লি, বিহারের সরকারও তাঁদের রাজ্যে এই আইনের বিরোধিতা করছেন ৷ রাজ্যের পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব এসেছিল ৷ তবে তা খারিজ করে দিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, এ রাজ্যে আমার পুলিশ যথেষ্ট ৷ বাংলার মানুষ সব সামলে নেবে ৷
রাজ্যে বিজেপির প্রিয় নেতাদের টাকা দিয়ে ট্রেন জ্বালানোর আদেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজ্যের মুসলিমদের বদনাম করার জন্যই এসব করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ সঙ্গে বিজেপির সরকার থাকার পরও অসম, ত্রিপুরাতে আন্দোলন কেন প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷ পাশাপাশি বিজেপিকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমিও একটা দল তৈরি করেছি ৷ আমিও একটা দলের চেয়ারম্যান ৷ আমরা NRC মানব না ৷ কী করবেন আপনারা? আমাদের সরকার ফেলে দেবেন? ফেলে দিন ৷ আমাকেও ফেলে দিন ৷ কিন্তু আমরা সম্মান নষ্ট হতে দেব না ৷
শুধু NRC বা CAA নয় ৷ দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ মোদীকে আক্রমণ করে বলেন, দেশের বাজারে আগুন লাগিয়েছেন ৷ দেশকে ভেঙে টুকরো করে দিয়েছেন ৷ কোনও বিপদ এলেই আমরা দেশদ্রোহী হয়ে যায় ৷ ওঁরা দেশের জন্য কোনও কাজ করেন না ৷ আর এসব বিপদগুলোকে লুকোনোর জন্য কখনও CAA নিয়ে খেলছেন, কখনও NRC নিয়ে খেলছেন, কখনও পুলওয়ামা নিয়ে খেলছেন ৷ আর মনে করেন, এভাবে দেশ চালাবেন ৷ দেশ চলবে না দেখে নেবেন ৷ আমরা তো তৈরি আছি কথা বলার জন্য ৷” দেশ থেকে সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে একা ফেট্টিওয়ালা দেশে থাকবেন, বিজেপি করবেন, তোপ মমতার ।
CAA-কে বেআইনি, অসাংবিধানিক বলেন তৃণমূল নেত্রী ৷ জানিয়ে দেন, আমরা আইন জানি আর মানিও ৷ দু-চারটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিল পাশ করে দিলেন, আইন তৈরি করে দিলেন ৷ এভাবে আইন বানানো যায় না ৷ জামিয়া মালিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার বিরোধিতা করে বলেন, যা হয়েছে, তা একদম ঠিক হয়নি ৷ আমার কাছে ভিডিয়োও আছে ৷ কে কীভাবে আগুন জ্বালিয়েছে সব আমার জানা ৷
বাংলাকে দখল করতে বিজেপির পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত বলেও জানিয়ে দেন ৷ বলেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করলেও আমি দিতে পারব না আমার বাবা মায়ের জন্মের নথিপত্র ৷ স্বাধীনতার ৭২ বছর পর ওরা ঠিক করবে কে ভারতের নাগরিক, আর কে নাগরিক নয় ৷ বিজেপির দয়ায় আমরা এখানে থাকি না ৷ বাংলাকে দখল করতে ওদের এটা পরিকল্পনা ৷ আমরা ভেস্তে দেব ৷ কিছু হতে দেব না ৷ গণ আন্দোলন করুন ৷ মিছিল করুন ৷ সই সংগ্রহ করুন ৷ দরকার পড়লে সবাই রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান ৷ লাখ-লাখ, কোটি-কোটি চিঠি পাঠান ৷ নিজেদের অধিকারের কথা বলুন ৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও NRC-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে ৷ আগুন জ্বলছে রাজ্যেও ৷ ৬টি জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা ৷ এই পরিস্থিতি থেকে রাজ্যকে বার করতেই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের ডাক মমতার ৷ আজ ময়দানের কাছে বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন তিনি ৷ গান্ধি মূর্তি হয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে গিয়ে শেষ করেন মিছিল ৷ তারপরই সকলের উদ্দেশে জানিয়ে দেন, এই লড়াই মানুষের লড়াই ৷ মনুষত্বের লড়াই ৷ NRC, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বন্ধ না করা পর্যন্ত তাঁদের এই লড়াই চলবে ৷ সারা দেশের সঙ্গে থাকবেন তিনি ৷
Be the first to comment