একটা আইন এবং তার পরবর্তী ঘটনা পরম্পরা ক্রমেই পরিস্থিতিকে তপ্ত করে তুলেছে। রাজ্যের দুই প্রধানের দোষারোপ-পালটা দোষারোপ সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছিল বারবার। অবশেষে কিছুটা হলেও শান্তি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় টুইট করে জানালেন, বুধবার রাজ্যের দুই শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে তাঁর। আবার, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলার সম্ভাবনা দেখা দিল দিনের শেষে।
কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর পর যখন ধনকড় দায়িত্ব নিলেন, তারপর থেকেই নবান্ন-রাজভবনের সম্পর্ক যেন নতুন মাত্রা নিয়েছে। একাধিক ইস্যুতে একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। কখনও সৌজন্যকে সামনে রেখে একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। কখনও আবার, রাজ্য প্রশাসনকে সঠিক পথে চলার বার্তা দিতে গিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন রাজ্যপাল। ঠিক তেমনই রাজ্য সরকারের পাশাপাশি সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন বলে রাজ্যপালের প্রতি খড়্গহস্ত হতে দেখা গেছে মমতাকে। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনকে কেন্দ্র করে এই দুই শীর্ষ প্রধানের চাপানউতোর যেন এবার চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে।
রাজ্যপাল দিন কয়েক ধরে চলা উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। শোনা গিয়েছে, সেই রিপোর্ট তিনি না কি প্রথমে কেন্দ্র, পরে রাষ্ট্রপতির কাছেও পাঠাতে পারেন। আবার, রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর করতে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনেরাল বীরেন্দ্র এবং মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
সূত্রের খবর, নবান্নর তরফে সবুজ সংকেত না মেলায় হাজির হতে পারেননি রাজভবনে। আর তখনই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রথমে টুইট বোমা, পরে পত্র বোমা উড়ে আসে রাজভবন থেকে।
চুপ করে থাকেননি মমতাও। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে নবান্ন থেকে পাঠানো হয় চিঠি। রাজ্যপালকে তাঁর ক্ষমতা-ভূমিকা-সাংবিধানিক মর্যাদার কথা ‘স্মরণ’ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ধনকড়ের ভূমিকা নিয়ে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করতেও ছাড়েননি তিনি। সোমবার রাতে দুই শীর্ষ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বের টানাপোড়েন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার দিনের শেষে কোথায় যেন একটা আলোচনার পথ তৈরি হল। রাজ্যপালের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজভবনে যাওয়ার কথা জানানো হল নবান্নর তরফে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বুধবার বেলা ৩ টে নাগাদ রাজভবনের গেট খুলতে চলেছে মুখ্যসচিব এবং মহানির্দেশকের কনভয়ের জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কোনওভাবেই মুখ্যসচিবরা রাজভবনে যেতে পারতেন না অর্থাৎ এটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট কিছুটা হলেও নমনীয় হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ সারাদিন রাজভবনের অপেক্ষা করলেও রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি সেখানে যাননি। দেখা করেননি। রাজ্যপালের সঙ্গে কথাও বলেননি। অপেক্ষা করলেও রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে খুব একটা কঠোর মন্তব্য উড়ে আসেনি রাজভবন থেকে। অন্যদিকে ফের একবার কেন্দ্রীয় আইনের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিপুল সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রা করেছেন। কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু তেমনভাবে (বিগত কয়েকদিন যা বার বার দেখা গেছে) ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেননি। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা চাপে পড়ে নমনীয় হচ্ছে দু’পক্ষই।
নবান্নর অলিন্দে কান পাতলে শোনা গেছে আরও এক গুঞ্জনও। পরিস্থিতি যদি নাটকীয় মোড় নেয় তাহলে বুধবার রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকও হতে পারে। এবিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারেনি কেউই । যদি সত্যি বৈঠক হয় তাহলে নিসন্দেহে বুধবারের বিকেলে নয়া ‘অধ্যায়’ রচিত হতে চলেছে।
Be the first to comment