তিন দিন ধরে শান্তির স্বার্থে এই আন্দোলনকে স্বার্থক করার জন্য সকলে যেভাবে নিরলস পরিশ্রম করেছেন তাদের সবাইকে স্যালুট ও শুভকামনা জানাই বৃহস্পতিবার একথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মমতা বলেন আমরা হিংসা চাই না তাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। ১হাজার বুলেটের থেকে ১০টা মানুষ যদি রাস্তায় নেমে শান্তির কথা বলে তার দাম অনেক বেশী। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বুলেট দিয়ে হয় না। আগুন জ্বালিয়েও হয় না। দাঙ্গা বা সন্ত্রাস করেও হয় না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করব রাস্তায় দাঁড়িয়ে। রাস্তা ব্লক করব না মানুষের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটা কথা বলি, দেশে আগুন লাগানো আপনার কাজ নয়। দেশের আগুন নেভানো আপনার কাজ। আপনার কাছে হাতজোড় করে আবেদন যখন আসাম, ত্রিপুরা, নর্থ ইস্টার্ন, দিল্লী, পাঞ্জাব, ইউপি, রাজস্থান জ্বলছে তখন আপনি কেন বলছেন জরুর হোগা?
কেন বলছেন আধার কার্ডে হবে না? তার মানে কি ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে? আধারে যখন হবে না তখন ব্যাঙ্ক, টেলিফোনে, পাসপোর্টে কেন সংযোগ করালেন? জনতাকে কেন নাকাল করলেন? বলছেন প্যান কার্ডেও হবেনা, তবে প্যান কার্ড কেন করালেন, প্যান কার্ডের সঙ্গে সংযোগ কেন করালেন?
বলছেন, ভোটার কার্ডেও হবে না। মানুষ ভোট দিয়েছিল বলে আপনার সরকার আমাদের সরকার। আর এখন বলছেন ভোটার লিস্ট নেহি চলেগা? তো ভোটার লিস্ট নেহি চলেগা, আধার কার্ড নেহি চলেগা, প্যান কার্ড নেহি চলেগা, তো বিজেপি কা মাদুলি চলেগা? একটা ওয়াসিং মেশিন লাগিয়ে দিয়েছে যারা বিজেপি করে তাদের সব কিছু ধুয়ে যায়, আর যারা বিজেপি করে না সব চোর, সব দেশদ্রোহী।
বিজেপি যখন ছিল না তখন দেশে কোনও অশান্তি ছিল না। বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তখন আমি দাঙ্গা দেখেছি। এরপর এসব কিছু ছিল না। মানুষ শান্তিতে ছিল। এখন কাশ্মীর, আসাম, ত্রিপুরা জ্বলছে।
গ্রামের কোথাও রেলস্টেশনে ঘটনা ঘটেছে আমরা অ্যারেষ্টও করেছি। অ্যাকশন নিয়েছি। আর আপনি বলছেন সবাইকে গুলি করে মেরে দাও? এটা কি কোনও গণতন্ত্রের কাজ?
আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি, আপনি শুধু বিজেপি নেতা নন, আপনি দেশকে সামলান। দেশের শান্তি বজায় রাখুন। আপনাকে বা আমাকে যখন ক্ষমতায় বসি তখন সংবিধানের শপথ নিয়ে বসতে হয়। তখন বলি আমরা সবাইকে একসাথে রাখব, সবাইকে একসাথে দেখব।
আপনি বলেছিলেন সবকা সাথ। সবকা বিকাশ। তাহলে আপনি কেন লোকের হাত ছেড়ে দেন? আপনি তো সবকা সাথ সবকা বিকাশ করেন নি। সবকা বিনাশ করেছেন। সত্যনাশ করেছেন।
আমরা সবাইকে শান্ত করে রেখেছি একটাই শর্তে, ক্যাগ বাপোস লো, এনআরসি নেহি চলেগা। যদি না করেন আমরাও দেখব আপনি এখানে সেটা কি করে করেন? কত জোর আপনার আছে? প্রয়োজন হলে সবাইকে বলব আপনারা সবাই রাস্তায় নেমে আসুন। গণতন্ত্রে সহশীলতা, শান্তিতে কাজ করতে হয়।
যদি বিজেপির নেতারা মনে করেন আপনার কথাই দেশকে শুনতে হবে, তবে জেনে রাখুন কোনও সরকার আসে কোনও সরকার চলে যায়। আপনি ৩৮% সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন তার মানে ৬২% লোক আপনাদের বিরুদ্ধে আছেন এটা জেনে রাখবেন।
আপনার সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে বলেই আপনি এই আইনটা পাশ করিয়েছেন। এটা অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, তথ্যহীন, বেআইনি। আগুন জ্বালানো খুব সহজ আগুন নেভানো খুব কঠিন। আমরা আগুন নেভাব। ক্যাব ফিরিয়ে দিয়েই ছাড়ব।
বিশ্বাস, ভরসা, লড়বার মানসিকতা থাকলে যেদিন ডাক দেব সব কাজ ছেড়ে আসতে হবে। আমি মনে করি ছাত্র যুবদের আন্দোলনে বেশী করে অংশগ্রহণ করা দরকার।
“নো এনআরসি, নো ক্যাব” আমাদের স্লোগান। বাংলা আজ যা ভাবে, কাল সারা দেশ সেটা ভাবে। দেশের সব আন্দোলন বাংলা থেকে শুরু হয়েছে।
আমি ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই আন্দোলন করেছিলাম। সিপিএম তখন নির্বাচন করতে দিত না। এক একজনের ৫০টা করে নাম ছিল। ‘নো আইডি কার্ড নো ভোট’ নিয়ে পার্লামেন্টে বলতে গিয়েছলাম। আমার ১৩জন কর্মী গুলিতে মারা গিয়েছিল। তারপর আমরা লড়তে লড়তে ‘নো আইডি কার্ড নো ভোট’ বাস্তবে রূপান্তরিত করেছিলাম। তাই ওদের বলি মিথ্যা কথা বলবেন না। ফেক ভিডিও ছাড়বেন না।
Be the first to comment