নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে বৃহস্পতিবারই দিল্লি থেকে লখনউতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। অশান্তির আবহে সতর্কতা হিসাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় জামিয়া মিলিয়া এবং ওখলা বিহার শাহিন বাগ মেট্রো স্টেশন। শুক্রবার বেলা গড়াতেই আবার উত্তেজনা ছড়াল দিল্লির রাজপথে। এ দিন জামা মসজিদে নমাজ শেষেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী।
সূত্রের খবর, শুক্রবারে জুম্মার নমাজের প্রার্থনা শেষেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় সুর চড়ান জামা মসজিদে আসা স্থানীয় মানুষরা। ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে দেখা যায় রাজীব গান্ধীর ছবি হাতে আন্দোলন করতে। সেখানে উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা পুলিশদের গোলাপ দিয়ে সহযোগিতার কথা জানান। অন্যদিকে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানায়। এখনও পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)নিয়ে বিক্ষোভের জেরে এ বার উত্তরপ্রদেশ এবং কর্নাটকের একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হল। পুলিশের গুলিতে বৃহস্পতিবারই লখনউয়ে এক জন প্রাণ হারান। দু’জন প্রাণ হারান মেঙ্গালুরুতে। দুপক্ষের সংঘর্ষে আহতও হন বহু মানুষ। তার জেরেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে দুই রাজ্যের একাধিক এলাকা। উত্তরপ্রদেশের সর্বত্র এখনও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়েছে মেঙ্গালুরুতে।
গতকাল বিক্ষোভ চলাকালীন লখনউয়ে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বাধে। সেইসময় একটি পুলিশ ফাঁড়ির বাইরে একাধিক গাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। সম্বলে একটি থানাও আক্রান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর । সরকারি বাসেও আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে। এই হিংসাত্মক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যার মধ্যে লখনউ থেকেই ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্বল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ জনকে। মৌ, বারাণসী, আলিগড় এবং প্রয়াগরাজ থেকেও বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট ১৯টি এফআইআর দায়ের হয়েছে লখনউয়ে। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ শফিকুর রহমান এবং ফিরোজ খান নামের দলের আর এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকালই উত্তরপ্রদেশের সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। এ দিনও তা জারি রয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে লখনউ, গাজিয়াবাদ, পিলভিট, সম্বল, বরেলী এবং মেরটের একাধিক জেলায়। সেখানে এসএমএস পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি চত্বর সংলগ্ন এলাকায়।
সেখানে লাল সতর্কতা জারি করেছেন জেলাশাসক চন্দ্রভূষণ সিংহ। ১০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী নামানো হয়েছে। এ ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে ৪ কোম্পানি র্যাফ। আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অতিরক্ত স্বরাষ্ট্র মুখ্যসচিব অবিনাশ অবস্থি। অন্যদিকে বাংলাতেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখনও বেশকিছু জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে।
Be the first to comment