ফের প্রকাশ্যে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত ৷ রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে খাঁচাবন্দী করে রাখতে চাইছে ৷ গণতন্ত্রকে বেঁধে ফেলা হয়েছে ৷ আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে ৷ সমাবর্তনে যোগ না দিতে পেরে ফেরার পথে এ’ভাবে কড়া ভাষাতে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেন জগদীপ ধনকড় ৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ইস্যুতে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ ছিলই। আর এই ইস্যুতে তাঁদের সঙ্গে রাজ্যপালের অবস্থান পরস্পরবিরোধী ৷ ছাত্র নেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছিল, আচার্যের হাত থেকে ডিগ্রির শংসাপত্র নিতে যেন অস্বীকার করেন পড়ুয়ারা ৷ তারই প্রতিফলন দেখা গেল আজ ৷ আচার্যকে ছাড়াই শুরু হল সমাবর্তন ৷ উপাচার্যের হাত থেকেই শংসাপত্র নিলেন পড়ুয়ারা ৷
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার সকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে ধনকড়ের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ চলে গো-ব্যাক স্লোগান ৷ দেখানো হয় কালো পতাকা ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কোনও ভূমিকা না দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন তিনি ৷ রাজ্য সরকার উপাচার্যকে চালিত করছে বলেই মনে করছেন তিনি ৷ বলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে খাঁচাবন্দী করে রাখতে চাইছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রিমোট দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৷ ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে ৷
তবে, এই বিক্ষোভে পড়ুয়ারা অংশ নেয়নি বলেও দাবি করেন তিনি ৷ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য আমাদের পড়ুয়ারা অপেক্ষা করছে ৷ আচার্য হিসেবে আমি গেটে দাঁড়িয়ে রয়েছি ৷ কয়েকজন গোটা ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে রেখেছে ৷ পড়ুয়ারা এখানে নেই ৷ ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন ৷ জানিয়েছেন, আচার্য হিসেবে আমি ছাত্রদের উপর এই পরিস্থিতির খারাপ প্রভাব পড়তে দিতে পারি না ৷
পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি আবেদন জানান ৷ আমার আবেদন, তাদের দেখান ৷ যারা আগুন নিয়ে খেলছে ৷ গণতন্ত্রকে নষ্ট করছে ৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করছে ৷ ছাত্রদের ভবিষ্যত নষ্ট করছে ৷ আমি এই বিষয়ে কখনও অনুমতি দিতে পারি না ৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গাড়িতে বসেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কথা জানিয়ে পরপর অনেকগুলি টুইট করেন জগদীপ ধনকড় ৷ প্রথম টুইটেই লেখেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি ৷ যাতে পড়ুয়ারা তাদের ডিগ্রি পায়, তাদের পরিশ্রমের ফল পায় এবং সমাজে তাদের অবদান রাখতে পারে ৷ দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ ৷ নীতি বিরুদ্ধ ৷ কর্তৃপক্ষ কোনও সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ৷ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি ৷”
এই টুইটের কিছুক্ষণ পর তিনি আবার টুইট করেন ৷ লেখেন, “প্রায় জনা পঞ্চাশেক পড়ুয়া রাস্তা আটকে রেখেছে ৷ সিস্টেমকে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে ৷ এটি একটি বিপর্যস্ত পরিস্থিতি তৈরি করবে ৷ আইনের কোনও ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না ৷ সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে আমি চিন্তিত ৷”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সংবাদমাধ্যমকে মানুষের কথা ভাবার দিকে নজর দিতে বললেন জগদীপ ধনকড় ৷ টুইটে লেখেন, “এই ধরনের পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমকে মানুষের ভালোর দিক চিন্তা করতে হবে ৷ ছাত্রদের স্বার্থ যাতে ঝুঁকিপূর্ণ না হয়, সেদিকে নজর ফেরাতে সংবাদমাধ্যমকেই ব্যবস্থা নিতে হবে ৷”
এরপর পরিস্থিতির কথা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা ৷ ইচ্ছাকৃতভাবেই বাধা তৈরি করা হয়েছে, যাতে পড়ুয়ারা তাদের পরিশ্রমের ফল না পায় ৷” সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার কথাও জানালেন ধনকড় ৷ মমতাকে উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, “উপাচার্যকে জানানোর পরও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি দেখে আমি অবাক ৷ বাধ্য হয়ে আমি যাদবপুর ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছি ৷”
পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের পাশাপাশি উপাচার্যকেও দায়ি করেছেন তিনি ৷ টুইটে লেখেন, এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক দৃশ্য ৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইচ্ছাকৃতভাবে ছুতো খুঁজছেন ৷ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি ৷ ধ্বংসাত্বক পরিস্থিতি ৷” উপাচার্যকে উল্লেখ করে তিনি আরও টুইট করেন, “উপাচার্যের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন দেখে আমি অবাক ৷ উপাচার্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ৷ বরং আমিই যোগাযোগ করেছি ৷ যারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ি, তাদের সঙ্গে কথা না বলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত উপাচার্য ৷
Be the first to comment