তেহরানের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, বড় মূল্য চোকাতে হবে তেহরানকে। শুক্রবার ভোরে বাগদাদ বিমানবন্দরের সামনেই রকেট হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানি কুদস সেনাপ্রধান কাসেম সোলেমানির। এরপরেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ইরানের হুঁশিয়ারি, ভয়ঙ্কর জবাব পাবে আমেরিকা। সেইসঙ্গে এই হামলার পরে মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন হামলায় সোলেমানির মৃত্যুর পরে পেন্টাগনের তরফে একটা বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এই বিবৃতিতে বলা হয়, “জেনারেল সোলেমানি বহুদিন ধরে ইরাকে বসবাস করা মার্কিন নাগরিক ও কূটনীতিবিদদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। গত কয়েক মাসে এই এলাকায় হওয়া সবকটি হামলার দায়ও তাঁর।” এই হামলায় ইরাকের কাতাইব হিজবুল্লাহ নেতা আবু মেহদি আল-মুহানদিসও খতম হয়েছেন। এই মুহানদিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইরাকে মার্কিন সেনার উপর রকেট হামলা চালিয়েছিলেন। গত শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়াতে থাকা কাতাইব হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কিছু ক্যাম্পের উপর মার্কিন বায়ুসেনার হামলার পরে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় এই গোষ্ঠীর সদস্যরা।
ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান আয়াতুল্লাহ আলি খোমেইনি সতর্ক করেছেন আমেরিকাকে। তিনি বলেছেন “যে শত্রুরা সোলেমানির রক্তে নিজেদের হাত নোংরা করল তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস বদলা নেওয়া হবে। সোলেমানির কাজ ও পথ চলা থামবে না। সেই কাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।”
ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জারিফ জানিয়েছেন, “মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি খারাপ বলে যে দাবি আমেরিকা করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। এই মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ইসলামের কম্যান্ডার কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করল তারা। এই হত্যা ব্যর্থ যাবে না। এবার আমেরিকা বুঝতে পারবে, মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি কী হতে পারে? আমেরিকাকে এই হামলার মূল্য চোকাতে হবে।” সোলেমানির মৃত্যুতে ইরানে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন এই সোলেমানি। আমেরিকা ও তার সঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব দেওয়ার প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। বেশ কয়েক বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ছক বানচাল করেছেন এই সোলেমানি। তাঁর মৃত্যুর পরেই জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইরান প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তারা। এই বৈঠকেই পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করা হবে বলে খবর।
এদিনের এই হামলার পরে কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, এক হামলায় ইরান ও ইরাকের অন্যতম প্রভাবশালী দুই ব্যক্তিকে খতম করেছে আমেরিকা। অর্থাৎ এই দুই দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা করেছে ট্রাম্প সরকার। তাই এই পরিস্থিতিতে ইরান, ইরাক-সহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলি আমেরিকার বাসিন্দা কিংবা কূটনীতিবিদদের থাকার জন্য নিরাপদ নয় বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কিংবা বিদেশমন্ত্রীর করা মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে প্রথমেই এই সব দেশে থাকা মার্কিন নাগরিকদের নিশানা করা হবে। তাইজন্য ইতিমধ্যেই এইসব দেশে থাকা মার্কিন নাগরিকদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে পেন্টাগন। কিন্তু তারপরেও এই হামলার প্রভাব অনেক দূর যাবে বলেই মনে করছে কুটনৈতিক মহল। সন্ত্রাস দমনের জন্য এই হামলা বলে পেন্টাগন যতই মুখ খুলুক, ইতিমধ্যেই জবাব দিতে ইরান তৈরি হচ্ছে বলেই ধারণা তাঁদের।
Be the first to comment