
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশ ছাড়া করার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের লক্ষ্য নিয়ে জনমানসে জল্পনা দানা বেঁধেছিল। আন্দোলনের নেতৃত্ব যে রাজনৈতিক ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী তা বোঝাই যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত হলও তা। আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের তরফে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটল। নাম দেওয়া হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীর মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউতে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম জানান, ‘বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করব।’
জানা গিয়েছে, নতুন দলে মোট শীর্ষ পদের সংখ্যা থাকছে ১০। এই ১০ জনের নামও প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাস্তায় বহু মানুষ জড়ো হন। বাংলাদেশের অন্যান্য দলগুলি জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নতুন দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে দু’জন করে থাকবেন। এছাড়াও থাকছে যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নামে একটি পদ। এদিন এই তিনটি নতুন পদ যোগ করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হলেন নাহিদ ইসলাম। এই পদে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এবং আরিফুল ইসলাম আদীব। নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীকে দলের মুখ্য সমন্বয়কারী করা হয়েছে। মুখ্য সংগঠন (দক্ষিণাঞ্চল)-এর দায়িত্ব পেয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং নাহিদা সারওয়ার।
এদিন নাহিদ ইসলাম সাফ জানান, তাঁরা অতীত নিয়ে যতটা না আগ্রহী, তার থেকে অনেক বেশি আগ্রহী নতুন দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি তুলে ধরে বলেন, বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। নাহিদের বক্ত্যে ভারত বিরোধীতার সুরও যেমন ছিল, তেমনি পাকিস্তানপন্থীদের প্রতিও ছিল সতর্কবার্তা। এদিন নতুন দলের সূচনা অনুষ্ঠানে কোরান, গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটক থেকে পাঠ করে ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু নতুন দলের শীর্ষনেতৃত্বের মধ্যে সংখ্যালঘুদের কোনও প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আদৌ এদের হাতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ কতটা রক্ষিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিন নতুন দলের আরেক নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরব হন বাংলাদেশে এযাবত চলে আসা ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে। নিজের বক্তব্যে পরিবারতন্ত্রকে কবরস্থ করার প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরেছেন হাসনাত। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এদেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ হয়েছে। এ দেশে কামারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে, এ দেশে কুমারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। এ দেশে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব উঠে আসবে।’
এদিন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হন। তাঁদের কেউ এসেছেন রংপুর থেকে, কেউ এসেছেন খুলনা থেকে। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। কর্মসূচিকে ঘিরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে সেখানে।
Be the first to comment