তাঁর নোবেল জয়ে উচ্ছ্বাসে যেমন ভেসেছে দেশবাসী, তেমনই নানা দিক থেকে এসেছে নিন্দা ৷ কেউ তাঁর নাগরিকত্ব, কেউ তাঁর চিন্তাধারা, কেউ তাঁর মতাদর্শ নিয়ে নানা কটাক্ষ করেছেন ৷ তার মাঝেই অকপট অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়েও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন অভিজিৎ ৷ বললেন, আমার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পীযূষ গোয়েল।
শনিবারই দেশের মাটিতে পা রেখেছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গেছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ৷ পরে কলকাতায় আসারও কথা রয়েছে। এর মাঝেই এক সংবাদসংস্থায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁকে নিয়ে যাবতীয় কটাক্ষ, যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিলেন নোবেলজয়ী ৷
শনিবার পুনেতে এক সাংবাদিক বৈঠকে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নোবেলজয়ীকে শুভেচ্ছা জানান ৷ একইসঙ্গে গোয়েল বলেন, একজন ভারতীয় নোবেল পেয়েছেন। তার জন্য গর্বিত আমরা। তাই বলে ওঁর সঙ্গে একমত হতে হবে এমন নয়। বিশেষত, গোটা দেশ যখন ওঁর ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েছে। অভিজিৎবাবুর চিন্তাভাবনার কথা সকলেরই জানা ৷ কিন্তু উনি সম্পূর্ণ একজন বামপন্থী ৷
কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, কংগ্রেসের NYAY প্রকল্পের গুণগান করেছেন নোবেলজয়ী, যা দেশবাসী গ্রহণ করেননি ৷ আমার মনে হয়, ওঁর পরামর্শের প্রয়োজন নেই আমাদের ৷ এ বিষয়ে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উনি আমার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ৷ অর্থনীতি নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট নয় ৷ কংগ্রেসের মতো যদি বিজেপি সরকার আমাকে জিজ্ঞেস করে একটি নির্দিষ্ট আয়সীমার অধীনে জগনণের সংখ্যা কত? আমি কি তাদের সঠিক পরিসংখ্যানটা বলব না? অর্থনীতিতে একজন পেশাদার মানুষ হিসেবে আমি তাদের সঠিক তথ্য দেবো ৷
তবে শুধু পীযূষই নন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পাওয়ার পর থেকেই তাঁর উদ্দেশে একাধিক সমালোচনা ধেয়ে এসেছে গেরুয়া বাহিনী থেকে ৷ নোবেল জয়ের পর বিজেপি সাংসদ অনন্ত হেগড়ে অভিজিতের তীব্র নিন্দা করেন। বাংলার বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন ৷ বলেছেন, যাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদেশি তাঁরাই নোবেল পান ৷ এটা নোবেল পাওয়ার মাপকাঠি কি না সেই প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর প্রতি তির্যক মন্তব্য করেছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ও ৷
এই বিষয়ে, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আমরা অনেক রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি ৷ নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখনও আমরা সেখানকার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে কাজ করেছি ৷ আমাদের খুব ভালো অভিজ্ঞতাও হয়েছিল ৷ আমরা অনেক বিজেপি পরিচালিত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি ৷ আমরা হরিয়ানার সঙ্গে কাজ করছি ৷ উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে কাজ করব ৷ শুধু কংগ্রেস সরকার বা বিজেপি সরকার এমন কোনও বিষয় নেই ৷ এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে ৷
তিনি জানিয়েছেন, যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইচ্ছে প্রকাশ করেন তাহলে সমস্তরকম সাহায্য করতে পিছপা হবেন না ৷ প্রসঙ্গত, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁৎ সংস্থার পরামর্শ মেনে ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রায় ১২ টি দেশ দারিদ্রমুক্তির আলো দেখতে পেয়েছেন ৷ কিন্তু নোটবাতিলের পর থেকেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তির বিরোধিতা শুরু হয়েছিল গেরুয়া শিবির থেকে ৷ এখন দেখার যাবতীয় বিতর্ক ভুলে কি মোদি সরকারও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হবেন কী না?
Be the first to comment