পরে রইল ‘বাগান’, বিদায় নিল ‘বাঞ্ছারাম’, প্রয়াত মনোজ মিত্র, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

Spread the love

রোজদিন ডেক্স: প্রয়াত মনোজ মিত্র। থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি শিল্পী বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৮.৫০ নাগাদ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা, নাট্যকার তথা সাহিত্যিক মনোজ মিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন কিছুদিন। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল বলে জানিয়েছিলেন ভাই অমর মিত্র। এদিনে ফেসবুকে দাদা মনোজ মিত্রের একটি ছবি পোস্ট করে অমর লেখেন, ‘শ্রীচরণকমলেষু, শত সহস্র প্রণাম। এই ছবি দেখছি আর কাঁদছি।’
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রবীন অভিনেতা। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর কিডনি এবং হৃদযন্ত্রের অবস্থা ভালো নয় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছিল, মনোজ মিত্রের হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে। হার্ট পাম্পের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। ক্রিয়েটিনিন এবং সোডিয়াম-পটাশিয়াম সমস্যাতেও ভুগছেন তিনি।
সেবার সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে এলেও চিকিৎসকদের কড়া পর্যবেক্ষণে ছিলেন মনোজ মিত্র। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসেও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন। পেশমেকার বসানোর পর কিছুটা সুস্থ হন অভিনেতা। কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িও ফিরে যান মনোজ মিত্র।
১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর অবিভক্ত সাতক্ষীরা জেলার ধূলিহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনোজ মিত্র। ১৯৫৭ সালে কলকাতার থিয়েটার শুরু করেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম.এ ১৯৭৯ সালে বড়পর্দায় পা দেন মনোজ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে বিভিন্ন কলেজে দর্শন বিষয়েও শিক্ষকতা করেন।
বহু দিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে পড়িয়েছেন। ২০০৩ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সিরিয়াল, নাট্যমঞ্চের পাশাপাশি চুটিয়ে সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন মনোজ। তপন সিনহা, সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চ্যাটার্জি, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন মনোজ মিত্র।
‘সাজানো বাগান’, ‘চোখে আঙুল দাদা’, ‘কালবিহঙ্গ’, ‘পরবাস’, ‘নরক গুলজার’, ‘অশ্বথামা’, ‘চাকভাঙা মধু’, ‘গল্প হেকিম সাহেব’, ‘রাজদর্শন’, ‘দেবী স্বর্ণমস্তা’, ‘মুন্নি ও সাত চৌকিদার’, ‘রেঞ্জার হাট’, ‘যা নেই ভারতে’-র মতো শতাধিক নাটক লিখেছেন তিনি। এসব নাটকের অধিকাংশই প্রযোজনা করেছে সুন্দরম, বহুরূপী।
পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতি ছিলেন মনোজ মিত্র। ২০১৯ সালের অগস্টে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন তিনি। শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১৯৮৫) পান তিনি। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে ছিল – শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার (১৯৮৬), শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার পুরস্কার (১৯৮৩ ও ১৯৮৯), এশিয়াটিক সোসাইটির স্বর্ণপদক (২০০৫), শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ইস্ট (১৯৮০), বাংলাদেশ থিয়েটার সোসাইটি প্রদত্ত মুনীর চৌধুরী পুরস্কার (২০১১), দীনবন্ধু পুরস্কার (২৫ মে ২০১২), কলাকার পুরস্কার।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে নির্মিত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল। তাঁর রচনা বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার উপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন মনোজ মিত্র। তাঁর অভিনীত ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘শত্রু’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ আজও মুগ্ধ করে সিনেপ্রেমীদের।


এদিন তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা তার এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “প্রখ্যাত নট, নাট্যকার ও পরিচালক, ‘বঙ্গবিভূষণ’ মনোজ মিত্র’র প্রয়াণে শোকাহত হলাম। বাংলা থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*