“মাথা উঁচু করে রাজনীতি করেছি, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না” জানালেন অধীর চৌধুরী

Spread the love
একুশ বছর ইতিহাসের অদ্ভূত সমাপতন। সেই সোমেন মিত্র হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। আর প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে অধীর চৌধুরীকে করা হল, ক্যাম্পেইন কমিটির চেয়ারম্যান! নতুন প্রদেশ কংগ্রেসের গঠন কাঠামো নিয়েই পরিষ্কার, উনিশের ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তায় হাঁটতে পারেন রাহুল গান্ধীর সর্বভারতীয় কংগ্রেস। শেষমেশ যদি তাই হয়, তা হলে সেই প্রদেশ কংগ্রেসের প্রচার কমিটির নেতৃত্বে নির্ভেজাল মমতা বিরোধী নেতা অধীর চৌধুরী নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন?
নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর অধীর চৌধুরী আজও জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করার প্রশ্নে আমি আপসহীন। এ কথা এক কোটি বার বলতে পারি।”
একুশ বছর আগে মমতা যখন দল ছেড়েছিলেন, তখন তা আপাত দৃষ্টিতে তাৎক্ষণিক হলেও সলতে পাকানো শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ মাস আগে থেকেই। সে বছর কলকাতায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল ৮ থেকে ১০ অগস্ট। বরাবরের রীতি অনুযায়ী অধিবেশনের শেষ দিন প্রকাশ্য জনসভা হয়। কিন্তু সোমেন মিত্র ঠিক করেছিলেন কোনও প্রকাশ্য সমাবেশ হবে না। কিন্তু ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থানে মমতা সে দিনও ছিলেন আপসহীন। তিনি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ৯ অগস্ট মেয়ো রোডে প্রকাশ্য সভা হবে। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, “ওঁরা ইনডোর, আমরা আউটডোর।” অর্থাত কংগ্রেস ততদিনে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হতে শুরু করেছে।
ইদানীং রাজ্য রাজনীতিতেও জল্পনা যে অধীর চৌধুরী বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। গত পাঁচ মাস ধরেই এই জল্পনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ, সংসদের অলিন্দে তাঁকে ডেকে মোদীর খোশগল্প ইত্যাদি কারণে সেই জল্পনা বেড়েছে। তা ছাড়া বিজেপি পরের কথা, ঘরোয়া আলোচনায় সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ নেতা বলছেন, অধীরবাবু বিজেপি-তে যোগ দিতে রাজি থাকলে সব শর্তে রাজি। শুধু তাঁদের একটাই চিন্তা, সে ক্ষেত্রে অধীরবাবু তাঁর চার বারের জেতা লোকসভা কেন্দ্র ধরে রাখতে পারবেন কিনা! কারণ, বহরমপুরে সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে ৪৮ শতাংশ।
কিন্তু অধীরবাবু? তিনি কী বলছেন?
প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর তাঁর বিজেপি-যোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একশো প্রশ্ন যে উড়ে আসবে তাঁর অজানা ছিল না। তাই বলছেন, “কংগ্রেসের সংগঠনে রদবদল হয়। এটা নতুন ঘটনা নয়। কেউ সারাজীবন এক পদে থাকেন না।” সেই সঙ্গে বলছেন, “মাথা উঁচু করে রাজনীতি করেছি। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন?”
রাজনীতিতে অধীর চৌধুরী বরাবরই সোজাসাপ্টা। তাঁর মেজাজটাই অন্যরকম। কোনও ভনিতা নেই। কোনও হেঁয়ালিও নেই।
তবে তা যেমন ঠিক। তেমনই এ-ও ঠিক রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা। প্রায় তিন দশক ধরে যিনি ধর্মনিরপেক্ষতার দর্শনে বিশ্বাস রেখে রাজনীতি করেছেন, তাঁর পক্ষে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানো সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে গিয়ে অধীর চৌধুরী প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে সরব হলেই যাঁরা খুশি হন। এমনকী কেউ কেউ ইরানের রেডিও শোনেন।
কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অনেক কিছুই তো ঘটতে পারে! বিজেপি-তে যোগ দেওয়াই একমাত্র বিকল্প নয়। ভুলে গেলে চলবে না, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নলকূপ প্রতীকে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনার ক্ষমতা অতীতে অধীরবাবুই দেখিয়েছেন। অধীরবাবুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সেই সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, ধরে প্রাণ থাকতে অধীরবাবু তৃণমূল বিরোধিতা ছাড়বেন না।
অধীরবাবুকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল, উনিশের ভোটে কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়, আপনি কী করবেন? জবাবে তিনি বলেন, “এর উত্তর নতুন করে আর কী দেব? আমার অবস্থান সবাই জানে। বৃহস্পতিবারও সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার অগণতান্ত্রিক। গণতন্ত্র ওঁদের ধাতেই নেই।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*