ডি ডি মন্ডল ঘাট রোডে ২৭ বিঘা জমির উপর আদ্যাপীঠ সঙ্ঘ মঠ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে হৃষিকেশ থেকে কলকাতায় আসেন শ্রী অন্নদা ঠাকুর। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে শিল্পীদের অসামান্য হাতের যাদুতে ১৩৭৫ বঙ্গাব্দের মকর সংক্রান্তিতে স্বপ্নে দেখা মন্দির গড়ে তোলেন অন্নদা ঠাকুর। ১০ কাঠা জমির উপর ৯৬ ফুট উঁচু বিশাল দেবী মন্দির। ১০ লক্ষ টাকার মন্দিরটির স্থাপত্যও অনবদ্য। বাংলার অনান্য মন্দিরের থেকে এই মন্দিরের গঠনশৈলী যেমন বিরল, ঠিক তেমনই অভিনব এর আঙ্গিক। দূর থেকে দেখে মনে হতেই পারে সামনা সামনি ৩ টি মন্দির যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। মন্দিরের চূড়ো ৩ টিও যেন ধাপে ধাপে নেমেছে। যা দূর থেকে দেখলে মনে হবে একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে।
মন্দিরটির যেমন অভিনবত্ব আছে, ঠিক তেমনই অভিনব দেবমূর্তি। কারুকার্য করা শ্বেত পাথরের ৩ ধাপের বেদির প্রথম ধাপে বসা অবস্থায় শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্তি। দ্বিতীয় ধাপে আদ্যামায়ের আদলে শিবের বুকের উপর দাঁড়নো অবস্থায় আছে অষ্টধাতুর দেবী (আদ্যামায়ের) মূর্তি। আর তৃতীয় ধাপে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। উল্লেখ্য, সেবায়েত বা পূজারি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না। দেবীর দর্শন সেরে নিতে হয় সামনের মন্ডপ থেকে।
প্রতিদিন সূর্যোদয়ের একঘন্টা আগে মঙ্গলারতি, সকাল সাড়ে ১০ টায় ভোগারতি আর সূর্যাস্তের দেড় ঘন্টা পর শীতলারতি অনুষ্ঠিত হয় মন্দিরে। দুপুর ও সন্ধ্যায় আরতির সময় দেবী দর্শনের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এছাড়া অনান্য সময় দেবীর দরজা বন্ধ থাকে। সেই কারনেই দেবীকে দর্শন করা যায় না। এছাড়াও প্রতিমাসে শুক্লপক্ষের নবমী, কৃষ্ণপক্ষের একাদশী, সংক্রান্তি, দুর্গা পুজোর সপ্তমি থেকে দশমী, ঝুলন, রাস, দোল পূর্ণিমার দিনগুলি ছাড়াও মহালয়া ও দীপীবলির দিন গুলির মতো বছরে মোট ৫২ দিনই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বসাধারনের জন্য মন্দিরের দরজা খোলবা থাকে। তবে মূল মন্দিরের সামনে থেকেই দেবতা দর্শন করতে হয়।
এছাড়াও মন্দিরের পশ্চিম দিকে প্রাচীনকালের ৬টি আটচালা শিবমন্দির আছে। উল্টো দিকে আছে শিবের মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিদিনই পুজো হয়। এছাড়াও শ্রী অন্নদা ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দিরের পূজার্চনা, অনাথ বালিকাদের জন্য আশ্রম, আশ্রয়হীন মায়েদের জন্য মাতৃ আশ্রম, দাতব্য চিকিৎসালয়, বিদ্যালয়, সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় ছাড়াও এখানে নানা সমাজকল্যানমূলক কাজ করা হয়। মূলত কৃষিকেন্দ্রের উপার্জনেই মন্দির তথা সঙ্ঘের বিভিন্ন কাজকর্ম চলে।
এছাড়াও ব্যাপক অন্নভোগের প্রচলন আছে মন্দিরে। কিছু টাকার বিনিময়ে ভক্তদের অন্নপ্রসাদ মেলে। কিন্তু যারা প্রসাদ খেতে চান তাদের সকাল ১০টার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করে নিতে হবে। তেমনই প্রতিদিনই মন্দিরে দরিদ্রনারায়ণ সেবারও ব্যবস্থা করা হয় মন্দিরে।
আদ্যাপীঠে উৎসব
প্রতিবছরই পৌষ সংক্রান্তিতে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মহা উৎসব পালিত হয়। দূর-দূরান্ত থেকে এইসময় প্রচুর মানুষ আসেন আদ্যাপীঠে। এছাড়াও চৈত্র মাসের রামনবমীতে আদ্যাপীঠে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। এই রামনবমী তিথিতেই শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশমতো ইডেন গার্ডেন্সের লেক থেকে আদ্যা মায়ের মূর্তি পাওয়া যায়। পূজোর পরে দেবীমূর্তির ভাসানও দেওয়া হয় গঙ্গায়। বর্তমান দেবীমূর্তি তারই প্রতিরূপ। রামনবমীর সময় কুমারী পুজোও একশোরও বেশী কুমার ভোজন আদ্যাপীঠের বিশেষ আকর্ষন। এছাড়াও ঝুলন পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমায় বিশেষ অনুষ্ঠান হয় আদ্যাপীঠে।
কীভাবে যাবেন?
শহর কলকাতা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখায় ট্রেনে চেপে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন। স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার উত্তরে আড়িয়াদহে আদ্যামায়ের মন্দির। ভোর ৪টে ৭ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ১০টা ২২ মিনিট অবধি ট্রেন রয়েছে। মাত্র ২১ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। এছাড়াও শহীদ মিনার থেকে প্রচুর সিএসটিসি বাস শ্যামবাজার হয়ে আড়িয়াদহে পৌঁছে যাচ্ছে। আছে প্রচুর মিনি এবং অনান্য বাসও যাচ্ছে দক্ষিনেশ্বরে। এরপর দক্ষিনেশ্বর নেমে পায়ে হেঁটে বা রিক্সায় চেপে পৌঁছে যেতে পারেন মন্দিরে।
কোথায় থাকবেন?
এখানে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল আছে। একদিকে যেমন বিলাসবহুল হোটেল পাবেন ঠিক তেমনই অন্যদিকে সাধারন প্রচুর হোটেল আছে। যেমন দেবমাল্য গেস্ট হাউস, হোটেল ট্রান্সিট ইন, আইএসআই গেস্ট হাউস, রেনবো গেস্ট হাউস, বেলুড় মঠ গেস্ট হাউসের মতো একাধিক হোটেল রয়েছে আদ্যাপীঠে।
Be the first to comment