রোজদিন ডেস্ক :-
প্রায় এক দশক পরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আপার প্রাইমারির কাউন্সেলিং শুরু হল। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকা নিয়ে কত ঝড়ই না বয়ে গেছে গত ১০ বছরে। কত আন্দোলনও হয়েছে, দিনের পর দিন অপেক্ষায় বসে থেকেছেন হাজার হাজার প্রার্থী। এবার সেই বহু প্রতীক্ষিত কাউন্সেলিংয়েই গরহাজির থাকলেন ২৮% প্রার্থী!
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বলছেন, সরকারি চাকরির বাজারে যেখানে এতই আকাল, এতদিন ধরে যেখানে নিয়োগ বন্ধ, সেখানে এই বিপরীত চিত্র রাজ্যের শিক্ষা জগতের কাছে বড়সড় অশনি সংকেত।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যা চলছে, তার প্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায়, যে ১৯৯৭ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি হওয়ার পরে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর নিয়ম করে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থীর বেছে নেওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। যতদিন না তা তারা ফিরিয়ে আনতে পারছে, ততদিন এই ঘটনা চলতে থাকবে।
সবচেয়ে বড় কথা, নবম-দশম বা একাদশ-দ্বাদশের মতো ঘটনা ঘটবে না তো, যেখানে কয়েক বছর চাকরি করার পরেও শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীদের সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, কে যোগ্য আর কে অযোগ্য! অনিশ্চয়তা নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়, কখন না বাতিল হয়ে যায় প্যানেল। ফলে অনেকেই মনে করছেন, এই অবিশ্বাসের বাতাবরণে একদিকে রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলো যেমন যোগ্য শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হবে, তেমনি দিন দিন বিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংখ্যাও কমবে।
গতকাল, বৃহস্পতিবারই জানা গেছিল, পুজোর আগেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের কাউন্সেলিং শুরু করল রাজ্য। জানা যায়, মোট ১৪ হাজার ৫২ জন উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। ইতিমধ্যে শূন্যপদের তালিকাও কমিশন নিজেদের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই চাকরিপ্রার্থীদের কাউন্সেলিং শুরু হয়। জানা গিয়েছিল ৩ ও ৪ অক্টোবর কাউন্সেলিং হবে। কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, পুজো মিটলে ২৪, ২৫, ২৮ ও ২৯ অক্টোবরও ফের নিয়োগের কাউন্সেলিং করা হবে।
বৃহস্পতিবার এসএসসি ভবনে আসা চাকরিপ্রার্থীদের কথায়, ‘আগেই জীবন থেকে ১০ বছর চলে গিয়েছে। একাধিকবার কাউন্সেলিংয়ে ডেকেও লাভ হয়নি। তবে এবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। তাই মনে হয় এবার চাকরি মিলবে।’
তবে এই আশার সঙ্গেই হতাশা বা আশঙ্কার পারদও যে যথেষ্ট, তা প্রমাণ করে দিল কাউন্সেলিংয়ে প্রার্থীদের গরহাজির থাকার পরিসংখ্যানই।
২০১৬ সালে উচ্চ প্রাথমিকের ১৪ হাজার ৩৩৯ শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষের পর মেধাতালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে ১৪ হাজার ৫২ জনের নাম সামনে আনা হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০২১ সালে কমিশনের তরফে জানানো হয় ওএমআর শিট পুনরায় মুল্যায়ন করে ১৪৬৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপরই মামলা গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। দীর্ঘ ৮ বছর পর গত অগস্টে জট কাটে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই জানান, পুজোর আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২০১৬ সালের উচ্চ প্রাথমিকে টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাউন্সেলিং হবে এই দফায়। মামলার জট কাটলে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর আশ্বাসও ইয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহালয়ার পরের দিন কাউন্সেলিং শুরু হওয়ায় স্বস্তিও মিলল ২০১৬ টেট উত্তীর্ণ উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের। তবে অস্বস্তিতে পড়ল গোটা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল চিত্র।
Be the first to comment