৪ জুন থেকে ১০৪ দিন পাহাড় বন্ধ ছিল। পাহাড়বাসীর বেশিরভাগই এ জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। আর দিন গুজরান হচ্ছিল না। আবার জমানো টাকা দিয়েও যে কিছু কিনে খাবেন তারও উপায় নেই। কারণ, দোকানবাজার খোলা ছিল না। এই পরিস্থিতিটিকে দারুণভাবে মোকাবিলা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যতক্ষণ না পর্যন্ত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ভাঙন ধরছে, ততক্ষণ তিনি ধৈর্য্য ধরেছিলেন। তারপর এখন পাহাড়ের সর্বত্র দোকানবাজার খোলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিষ্কার করা হচ্ছে, পর্যটকরাও যাচ্ছেন। পাহাড়বাসী ১০৪ দিনের বন্ধে নাকাল হয়েছেন, অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন যে দাবিই হোক না কেন, তা আদায় করার জন্য বিমল গুরুং-রোশন গিরি যোগ্য নেতা নন। বিমল গুরুংও সেটা বুঝতে পেরেছেন। বিনয় তামাংরা গুরুংকে ছেড়ে দেওয়ার পর কার্শিয়াং, দার্জিলিং, কালিম্পং—এই তিনটি পুরসভার বেশিরভাগ কাউন্সিলাররা গুরুংকে ছেড়ে চলে গেছেন। তিন জন বিধায়কও এখন আগের মতো আর বিমল গুরুং-এর পক্ষে নেই। বিমল গুরুং-এর সঙ্গে তিন দিন আগেও যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিককে খুন করা অপরাধ হয়েছে বলে মনে করেন। অমিতাভ অফিসার কি পুলিশকর্মী সেটা বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো বিমল গুরুংদের বুঝতে হবে, রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে গুলির লড়াই চালিয়ে জেতা যাবে না। দার্জিলিং-কে কাশ্মীর বানানো যাবে না। অমিতাভ খুনের পর স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, দলের ফাটলের জন্য কার্শিয়াং, কালিম্পং, দার্জিলিং-এর পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে অশান্তি করা কঠিন হয়ে পড়বে। এবং বিমল গুরুং-রোশন গিরিদের পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজিত হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। যে কোনও দিনই খবর আসবে বিমল গুরুংরা পরাস্ত পুলিশের কাছে। দাবি আদায় তো দূরের কথা, দলের কর্মীরাও তখন পাশে থাকবেন না। দু-একদিন বিক্ষিপ্তভাবে গুলিচালনার ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু অমিতাভর খুন গুরুংকেই শেষ করে দিল। এরপর ১০৪ দিন কেন ১০ দিনও পাহাড় বন্ধ রাখা সম্ভব হবে না। মমতা ব্যানার্জি ফের যাবেন। বারবার যাবেন। মাঝের কিছু দিনের অশান্তির পর পাহাড় ফের হাসবে।
দেবাশিস ভট্টাচার্য
সম্পাদক
১৫.১০.২০১৭
Be the first to comment