সকালে সুপ্রিমকোর্টের ডেডলাইন, রাতে পালটা সরকারকে ডেডলাইন চিকিৎসকদের, কর্মবিরতি উঠছে না

Spread the love

 

চিরন্তন ব্যানার্জি:-

একদিকে সোমবার যখন দেশের উচ্চ আদালত জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজ ফেরার সময় বেঁধে দিয়েছে, অন্যদিকে প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসকরাও ওই রাতেই সরকারকে পালটা সময় বেঁধে দিলেন।
সোমবার সকালে সুপ্রিমকোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে হবে। আর সোমবার রাতেই প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, এখনই তাঁরা কাজে ফিরছেন না। বরং তাঁরাও সরকারের কাছে পাঁচদফা দাবি জানিয়ে সরকারকে ডেট লাইন দিয়ে দিলেন। তাঁদের বক্তব্য, সব দাবি পূরণ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। তবেই কর্মবিরতি তোলার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। যদিও মঙ্গলবারই আবার তাঁরা স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সেখানে ধর্নাও করবেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি গোটা ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু এদিন আবারও প্রশ্ন তোলা হয়, গ্রেফতার আগে পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য। জুনিয়র ডাক্তারদের কথায়, রাজ্য সরকার এখন পুরো গাফিলতি সিবিআই তদন্তের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। বিরূপাক্ষ বা অভীক দে-কে সাসপেন্ড করা হলেও যথাযথ কারণ দেখানো হয়নি। সন্দীপ ঘোষকে শুধু শো-কজ করা হয়েছে। তাঁদের কটাক্ষ, ‘এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ঘটনা।’ আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কথায়, ”এরকম একটি দুর্বল সাসেপনশন অর্ডার কোর্টে গেলেই প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হবে। এটি বাস্তবে গণক্ষোভ প্রশিমত করার জন্য একটি আইওয়াশ ছাড়া আমরা কিছু মনে করতে পারছি না।” তাঁদের দাবি, সুস্পষ্টভাবে রাজ্য সরকার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কড়া ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিক, অভীক দে ও বিরূপাক্ষকে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে সাসেপন্ড করুক স্বাস্থ্যভবন। তাঁরা এও বলছেন, ”আর জি করের মতো অবস্থা আমরা চাই না ভবিষ্যতে কোনও মেডিক্যাল কলেজে হোক। কিন্তু ৯ অগস্টের ঘটনা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এটাও মানতে হবে।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে সকলকে উৎসবে ফেরার বার্তা দিয়েছেন। এই মন্তব্যেরও তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রতিবাদী ডাক্তাররা। এই প্রেক্ষিতে তাঁরা পাল্টা বলেছেন, ”মঙ্গলবার ৫টার মধ্যে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করে আমাদের দাবিগুলিকে মিটিয়ে দিক। তবেই আমরা কর্মবিরতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন ভেবে দেখতে পারি। নাহলে আমরা বুঝব, সরকার আদৌ চায় না অচলাবস্থা কাটুক।”
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার পাঁচ দফা দাবি নিয়ে করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
যে পাঁচ দফা দাবির কথা তাঁরা তুলেছিলেন, সেগুলি হল— প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। এদিন এই পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি এ বার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার ইস্তফাও চাইলেন তাঁরা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*