রোজদিন ডেস্ক :-
আড়াই মাসের মাথায় হাসিনা বিরোধী অভ্যুত্থানের ছবি ক্রমশ ফিরে আসছে বাংলাদেশে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানী ঢাকায় দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিকাল থেকে কয়েকশো বিক্ষোভকারী বঙ্গভবন ঘিরে রেখেছে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়। দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এখনও পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে সরাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ ও সেনা। রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। ঢাকার বাইরে একাধিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন বিক্ষোভ চলছে।
গুলিবিদ্ধ দু’জনের নাম হল ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। হাসপাতাল জানিয়েছে, সাউন্ড গ্রেনেডেও একজন আহত হয়েছেন। তিনজনের অবস্থাই গুরুতর।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাদের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয় সোমবার মাঝরাত থেকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হস্টেলের ছাত্ররা ক্যাম্পাসে সারা রাত বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সেখানে জানানো হয় মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সভা হবে।
সেখানে সমাবেশ এখনও চলছে। সেখান থেকেই বিকালে দফায় দফায় বহু মানুষ রাষ্ট্রপতির অফিস-বাড়ি বঙ্গভবনের বাইরে জড়ো হতে থাকে। পুলিশ ও সেনার সঙ্গে তাদের এখনও খণ্ডযুদ্ধ চলছে। সারারাত সংঘাত চলবে বলে অনেকেই মনে করছেন। রাত যত বাড়ছে, ততই বিক্ষোভকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সপরিবারে বঙ্গভবনে রয়েছেন। সদর গেটের ভিতরে রাষ্ট্রপতি নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী বা পেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট মানব প্রাচীর গড়ে রেখেছে। বিক্ষোভকারীরা গেট ভেঙে ঢুকে পড়লে প্রেসিডেন্ট গার্ড সরাসরি গুলি চালাতে পারে। তাদের সেই আইনি ও সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। সম্ভাব্য রক্তপাত এড়াতে সেনা ও পুলিশ রাষ্ট্রপতি ভবনের মূল ফটকের বাইরে বিক্ষোভকারীদের আটকে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গভবন ঘিরে এমন সংঘাতের নজির নেই।
এরই মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ঘোষণা করে সাতদিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। একই সঙ্গে আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং হাসিনা জমানার তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাতিল করতে হবে। মঙ্গলবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর হাসনাত আবদুল্লাহ এই সব সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
এদিকে, শেখ হাসিনার মনোনীত রাষ্ট্রপতিকে সরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও তৎপর। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর সাংবিধানিক ও আইনি দিকগুলি নিয়ে কথা বলেন। ঘটনা হল, রাষ্ট্রপতি নিজে না সরে না গেলে তাঁকে হটানো কঠিন। সংবিধান ও আইনের কোনও অনুচ্ছেদ বা ধারায় সাহাবুদ্দিনকে সরানো কঠিন বুঝেই ছাত্রদের পথে নামানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই দফায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারের বিবাদের কারণ, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র। রাষ্ট্রপতি এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকারে বলেন, হাসিনা পদত্যাগের কোনও দলিল বা প্রমাণ তাঁর কাছে নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র দেখেননি। সরকারের কাছে চেয়েও পাননি।
যদিও ৫ অগাস্ট হাসিনা দেশ ছাড়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। আমি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি।’ সরকারের বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি এখন মিথ্যাচার করছেন। তিনি যদি পদত্যাগপত্র নাই-ই পেয়ে থাকেন তা হলে ৫ অগাস্ট কেন বলেছিলেন তিনি হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে বলেছিলেন তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তাঁর এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না তা সরকার বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের দুই উপ প্রেস সচিব সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানান, আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সম্পূর্ণ একমত।
Be the first to comment