তাঁর হাত ধরেই ফের মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে দল। কিন্তু ভোটের লড়াইয়েই থাকছেন না অখিলেশ যাদব । আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির পারদ ক্রমশ চড়ছে উত্তরপ্রদেশে । তার মধ্যেই ভোটে লড়বেন না বলে জানিয়ে দিলেন সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সুপ্রিমো অখিলেশ।
মহম্মদ আলি জিন্নাকে মহাত্মা গান্ধী এবং এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মতোই স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন অখিলেশ। সেই নিয়ে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করে চলেছে বিজেপি। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তার মধ্যেই আগামী নির্বাচনে নাম লেখাবেন না বলে জানিয়ে দিলেন আজমগড়ের সাংসদ তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ।
ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে সোমবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভোটে না লড়ার কথা ঘোষণা করেন অখিলেশ। তবে নিজে ভোটে না লড়লেও, আঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করে বিজেপি-কে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া চালু রাখবেন বলে জানান তিনি। অখিলেশ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় লোক দলের (আরএলডি) সঙ্গে জোট পাকা ৷ আসন ভাগাভাগিতে শুধু সিলমোহর পড়া বাকি ৷’’
এর পরই ভোটে লড়বেন না বলে জানিয়ে দেন এসপি প্রধান ৷ তিনি বলেন, ‘‘নিজে এ বার বিধানসভা ভোটে লড়ছি না ৷ তবে কৃষক, সাধারণ মানুষের সমস্যা, বেকারত্ব নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব ৷ মানুষের সমর্থন পেলে, আমাদের সরকার সমস্ত সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করবে ৷ প্রত্যেকের জন্য তৈরি করা হবে ন্যূনতম প্রকল্প ৷’’
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অখিলেশ ৷ বর্তমানে আজমগড়ের সাংসদ ৷ আগে কনৌজ থেকেও উত্তরপ্রদেশের হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৷ রাজ্য বিধান পরিষদেরও সদস্য ছিলেন ৷ কিন্তু দলের নেতৃত্বে থেকেও কেন ভোটে লড়বেন না, তার কারণ খোলসা করেননি অখিলেশ বরং জানিয়েছেন, তিনি নিজের মনের কথা জানিয়েছেন ৷ এবার দল সিদ্ধান্ত নেবে , তাঁকে ভোটের ময়দানে নামানো হবে, না, হবে না ৷
পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্ন নেই বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন অখিলেশ ৷ কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলের পরিবর্তে আরএলডি-র মতো আঞ্চলিক দলগুলিকে একত্রিত করে বিজেপি-কে টক্কর দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। যদিও তবে প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও ৷ লখিমপুর খেরি, হাথরসের মতো ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সরাসরি প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা ৷
তবে কংগ্রেস নয়, উত্তরপ্রদেশে একমাত্র এসপি-ই বিজেপি-এর মোকাবিলা করতে সক্ষম বলে মত অখিলেশের ৷ তাঁর কথায়, ‘‘সমাজবাদী পার্টিই একমাত্র দল, যারা বিজেপি-র মোকাবিলা করতে পারে এবং তাদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে ৷ কৃষকরা আমাদে সঙ্গে রয়েছেন ৷ এবার রাজ্যে পরিবর্তন আসবেই ৷ মানুষ মনস্থির করেই ফেলেছেন ৷ কোভিডের সময়ও আমাদের কর্মীরা রাস্তায় বেরিয়ে সাহায্যে ছুটে গিয়েছেন ৷ সরকার যাঁদের দিকে ফিরেও তাকায়নি, আমরা তাঁদের সবরকম ভাবে সাহায্য করেছি ৷ তা সহ্য করতে না পেরে মামলা করা হয়েছে আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে ৷ কিন্তু আমরা পিছিয়ে আসিনি ৷’’
তবে দলকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হলেও, বিজেপি, কংগ্রেস এবং বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) থেকে কিছু নেতাকে ভাঙিয়ে আনা ছাড়া জোটের প্রশ্নে এখনও পর্যন্ত নজরকাড়ার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি অখিলেশ ৷ আরএলডি-র সঙ্গে জোটের কথা পাকা হয়ে গেলেও, আসন ভাগাভাগি এখনও ঝুলে রয়েছে ৷ কাকা শিবপাল সিং যাদবের প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি লোহিয়া (পিএসপিএল)-র সঙ্গেও জোট বাঁধা নিয়ে আলোচনা আটকে রয়েছে ৷
পুরনো বিবাদ সরিয়ে রেখে অখিলেশ যদিও কাকার সঙ্গে হাত মেলাতে প্রস্তুত ৷ জোটে কাকা এবং তাঁর দলকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হবেও বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ তবে শিবপালের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ৷ অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশে খাতা খুলতে চাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সঙ্গেও অখিলেশের হাত মেলানো নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল ৷ কিন্তু তেমন কিছুই এগোয়নি বলে জানিয়েছেন অখিলেশ ৷ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর সঙ্গেও কথা এগোয়নি তাঁদের ৷
Be the first to comment