মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বলুন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যাপ্টার ক্লোজড। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তা বলছে না। কেন্দ্রীয় সরকার তা জিইয়ে রেখেছে। এবার নয়া নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলাকে কোনও সরকারি কাজে নতুন করে নিয়োগ করতে হলে ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র লাগবে। এখন থেকে এই ছাড়পত্র লাগবে বলে জানানো হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওই সরকারি আমলা যে সংস্থার হয়ে, বা যে যে সংস্থার হয়ে চাকরি করেছেন, তাদের ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র মিললে তবেই তাঁকে পুনর্নিয়োগ করা যাবে। এবার এই নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাগে আনতে না পেরে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে মনে করছেন আমলা মহল। ভিজিল্যান্স কমিশনের এই নির্দেশিকার লক্ষ্য, কেন্দ্রের অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের গ্রুপ ‘এ’ পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা। এবার কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা সমতুল মর্যাদার অফিসারদের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এই অফিসারদের চুক্তির ভিত্তিতে বা পরামর্শদাতা হিসেবে পুনর্নিয়োগ করতে হলে এবার থেকে ভিজিল্যন্স ছাড়পত্র লাগবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবারই রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পদে পুনর্নিয়োগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাতে আঁতে ঘা লেগেছে কেন্দ্রের। কারণ আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল। সেখানে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় তো গেলেনই না, উলটে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হয়ে কেন্দ্রকে কলা দেখিয়েছেন। আর তার তিন দিন পরেই জারি হল কেন্দ্রীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এই নতুন নির্দেশিকা।
ভিজিল্যান্স কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ‘বহু সরকারি সংস্থাকে দেখা গিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের পেশাদারি যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। অনেকক্ষেত্রেই এই বিষয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। যে সমস্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা হয়েছে, তাদেরও এই ধরনের সরকারি পদে নিয়োগের রেকর্ড রয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
নির্দেশিকায় কমিশন আরও জানিয়েছে, কোনও সরকারি–বেসরকারি পদে যদি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলাকে নিয়োগের কথা ভাবা হয়, সেক্ষেত্রে সেই সুযোগ বিশেষ একজনকে দেওয়া যাবে না। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকারি ক্ষেত্রে তার বিজ্ঞাপনও দিতে হবে। এমনকী বাকিদেরও আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, সরকারি কাজের স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।
উল্লেখ্য, এখন যিনি রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশনার, প্রদীপ ব্যাস নিজেও একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএফএস অফিসার। ২০২০ সালে ৫ বছরের চুক্তিতে তাঁকে এই পদে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল। ভিজিল্যান্স কমিশন সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট সংস্থার থেকে যদি ১৫ দিনের মধ্যে জবাব না আসে তবে তাদের একবার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হবে। যদি প্রথম চিঠি পাঠানোর ২১ দিনের মধ্যে কোনও জবাব না আসে তবে ধরে নিতে হবে ওই অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র পায়নি। সুতরাং নতুন কাজে যোগ দেওয়ার আগে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসারকে এই শর্ত মানতে হবে।
Be the first to comment