একুশের বিধানসভা ভোটের সময় দিল্লি-কলকাতা কার্যত ডেইলি প্যাসেঞ্জার ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অমিত শাহ। তারপরও বহুবার সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে কলকাতায় এসেছেন শাহ, কিন্তু সেন্ট্রাল এভিনিউতে ৫, মুরলিধর সেন লেন মুখো হননি কোনওদিন। এই প্রথম রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে পা রাখলেন অমিত শাহ। বেশ কিছুক্ষণ বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করকেন। তবে শাহ নিজে বললেন কম, শুনলেন বেশি। তারই ফাঁকে বিরোধী দলগুলি সম্পর্কে নিলেন খোঁজ-খবর। অনেক কিছুই বোঝার চেষ্টা করলেন। সূত্রের খবর, বাংলায় দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে কোনও কথাই তিনি শোনেননি বা বলেন নি।
সূত্রের খবর, শাহ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তিনি দলের নেতাদের কাছে খুঁটিয়ে জানতে চান, বর্তমান বাংলায় বাম-কংগ্রেসের অবস্থা কেমন? পঞ্চায়েতে ভোট কাটাকাটির সম্ভাবনা কতটা, সেই প্রশ্নও করেন শাহ।
আজ, শনিবার সকালে রাজ্য সরকারের সদর দফতর নবান্নে পূর্বাঞ্চল পরিষদ (ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিল)-এর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগের রাতে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বসে কি “সেটিং” তত্ত্ব খারিজ করার চেষ্টা করলেন শাহ? জল্পনা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ শাহের বিমান কলকাতায় নামে। এর পর গাড়িতে চালকের পাশের আসনে শাহ, পিছনের আসনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে তাঁর কনভয় পৌঁছায় মুরলীধর সেন লেনে দলের রাজ্য দফতরে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ধরনের নিরাপত্তা বলয় পেয়ে থাকেন, তাতে সংকীর্ণ গলির ভিতর বিজেপির রাজ্য দফতরে কেন এলেন শাহ, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গ বিজেপির দুই নেতা দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীর সংঘাতের প্রেক্ষাপটে শাহ সরকারি সফরে কলকাতা এসে যে ভাবে দলীয় বৈঠকে হাজির থাকলেন, তাতে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কোন্দল মেটাতে কড়া দাওয়াই দিতে পারেন তিনি। কিন্তু না বাংলার খুচরো নেতাদের কোন্দল নিয়ে একেবারে আলোচনা করতে আগ্রহী নন তিনি, সেটা শুক্রবার রাতে ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন।
শুক্রবারের বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ছাড়াও হাজির ছিলেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয়, রাজ্য বিজেপির পাঁচ সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং দীপক বর্মনরা।
অন্যদিকে, আজ শনিবার নবান্নে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। স্রেফ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে থাকবেন বিহারের মুখ্য়মন্ত্রী নীতীশ কুমার, ঝাড়খণ্ডের হিমন্ত সোরেন ও ওড়িশার নবীন পট্টনায়েকও। সূত্রের খবর, বৈঠকে গরুপাচার এবং বিএসএফ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাবে কেন এখনও অনুমোদন মিলল না? সেই প্রসঙ্গও তুলতে পারেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আলোচ্যসূচিতে রয়েছে সীমান্ত সংক্রান্ত ৪০টি সমস্যা।
এদিকে, জোকা থেকে বিবাদ বাগ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত চলবে মেট্রো। রেলের সেফটি কমিশনার পরিদর্শন করার পর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিতিতে নয়া রুটে মেট্রোর উদ্বোধন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। রেলমন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেও চিঠি পাঠিয়েছিল মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অমিত শাহের সময় পাওয়া যায়নি! ফলে আপাতত স্থগিত জোকা-তারাতলা মেট্রোর উদ্বোধন।
Amit shah-kolkata-visit-bjp-head quaters-meeting
Be the first to comment