কর্তারপুর করিডর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বরফ গলানোর চেষ্টা হলেও, তলে তলে যে রাজ্যে বেনোজল ঢুকে পড়ছে সেটা বেশ জোর গলায় বললেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিং। জম্মু-কাশ্মীরের মতো পঞ্জাবকেও অশান্ত করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে পাক সেনারাও। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা কাশ্মীর থেকে ঢুকে পড়ছে পঞ্জাবে, স্থানীয়দের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বড়সড় নাশকতার ছক কষছে। তাদের মদত দিচ্ছে খলিস্তানি জঙ্গিরাও।
অমৃতসরে গ্রেনেড হামলার পরই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, ওই হামলার পিছনে লস্কর নেতা হাফিজ সইদের মস্তিষ্ক রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে পঞ্জাবে অন্তত এক ডজন পাকিস্তানি জঙ্গি মডিউলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে একাধিক জঙ্গিকে। যাদের জেরা করে জানা গিয়েছে যে হাফিজ সইদ ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন করে পঞ্জাবকে অশান্ত করতে সক্রিয় হয়েছে। অমৃতসর হামলার পিছনে খলিস্তানি জঙ্গিদেরও হাত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “বর্তমানে পঞ্জাবের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে প্রায় ৬০০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। তাঁদের সবাই খারাপ আমি বলছি না, অনেকেই মেধাবী। তবে তাঁদের মধ্যেও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে যাঁদের জঙ্গি যোগ রয়েছে।” ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, কট্টরপন্থী খলিস্তানি জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে হাফিজ। সম্প্রতি পঞ্জাবের একাধিক শহরে ডজনখানেকের বেশি জঙ্গি মডিউল ও স্লিপার সেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে একাধিক কাশ্মীরি পড়ুয়াও।
গোয়েন্দাদের দাবি, কাশ্মীরে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরই জম্মু-পঞ্জাব সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয় পঞ্জাবি যুবকদের ওই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি কোনও সম্পর্ক পাওয়া না গেলেও, পঞ্জাবের বিভিন্ন কলেজে পাঠরত কাশ্মীরি পড়ুয়াদের সঙ্গে পাক জঙ্গিদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “৬০০০ পড়ুয়ার মধ্যে যদি পাঁচজন জঙ্গি কার্যকলাপে নিযুক্ত হন, তাহলে বাকিদেরও তাঁরা সেই কাজে টেনে নেবেন। এই ভাবেই নিজেদের নেটওয়ার্ক বাড়াচ্ছে পাক গুপ্তচর সংস্থা।”
আগামী বুধবার ভারত-পাকিস্তান করতারপুর সীমান্ত করিডরের উদ্বোধনে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মামুদ কুরেশির নিমন্ত্রণ সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন সুষমা স্বরাজ। তেলঙ্গানা বিধানসভা ভোটে প্রচারে ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে সফর এড়িয়ে গেছেন সুষমা। পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ছাড়াও পাকিস্তানের তরফে নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিং এবং কংগ্রেস নেতা নভজ্যোত সিং সিধুকে। সিধু নিমন্ত্রণকে স্বাগত জানালেও, অমরেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছেন, এই সন্ত্রাসের আবহে তিনি পাকিস্তান যেতে চান না। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে ইমরান খানের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি, কিন্তু এমন অবস্থায় আমি যেতে চাই না যখন রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের পরিস্থিতি চলছে।” তবে, তাঁর ক্যাবিনেটের মন্ত্রী হিসেবে সিধুর পাকিস্তানে যাওয়া নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Be the first to comment