অমৃতসরের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া মিলেছে। আহত শতাধিক। অমৃতসরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সকলের।
শুক্রবার দশেরা উপলক্ষে রাবণ দহনের অনুষ্ঠান চলছিল অমৃতসর থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে ধোবিঘাট এলাকায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, কমপক্ষে হাজার সাতেক মানুষ রাবণ দহন দেখতে জড়ো হয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই দাঁড়িয়েছিলেন ধোবিঘাটের জোড়া ফটক ক্রসিংয়ের কাছে রেল লাইনের ধার ঘেঁষে। কারণ ওখান থেকে দহনের দৃশ্য অনেক ভাল দেখা যায় বলে এলাকাবাসীর অভিমত।
তার মধ্যেই সশব্দে ফাটছিল বাজি। কিছুই শোনা যাচ্ছিল না বাজির আওয়াজে। এই অবস্থায় আচমকা আগুনের ফুলকি ছুটে আসতে থাকে দর্শকদের দিকে। অনেকেই আগুন থেকে বাঁচতে সরে আসতে গিয়ে রেললাইনে উঠে পড়েন। আর সেই সময়েই বাজির তীব্র আওয়াজের মধ্যে জলন্ধর-অমৃতসর ডিএমইউ বেশ কিছু মানুষকে পিষে দিয়ে চলে যায়। আচমকা এই দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে পাশের লাইনে চলে আসে অমৃতসর-হাওড়া এক্সপ্রেসও। বাঁচার পথ পাননি বেশির ভাগ মানুষই।
প্রত্যদর্শীদের বায়ান অনুযায়ী দর্শকদের অনেকই রাবণ দহনের ছবি বা ভিডিও তুলছিলেন। অনেকে সেলফি নিচ্ছিলেন। বাজির তীব্র আওয়াজে ট্রেন আসার শব্দ শুনতেই পাননি দর্শকরা। রেলের পক্ষ থেকে জাননো হয়েছে চালক এমার্জেন্সি ব্রেক কষলেও তা কাজ করেনি। এই অবস্থাতে দুর্ঘটনা ঘটার সময়ে এবং ঘটার পরেও বহু মানুষকে দেখা যায় মোবাইল নিয়ে ছবি ও সেলফি তুলতে। ভিডিও-ও করছিলেন অনেকে।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করেন, “কী ভীষণ ভাবে এড়ানো যেত এই দুর্ঘটনা! ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে এত বড় দুর্ঘটনা আন্দাজই করতে পারছেন না তাঁরা! ট্রেনগুলি পিষে দিয়ে চলে যাওয়ার পরেও কী নির্বিকার মুখে তাঁরা ভিডিও করছেন!” আম আদমি পার্টির নেত্রী প্রীতি শর্মা মেনন টুইট করেন, “ভিড়ের মধ্যে ট্রেন পিষে দিয়ে চলে গেল আর সকলে ভিডিও করছেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
তবে এই নতুন নয়। এর আগেও সারা দেশের ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ার চেয়ে ছবি বা সেলফি তুলতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। এই প্রবণতা বহু বার সমালোচিত হয়েছে, নিন্দিত হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন যে একটুও আসেনি, শুক্রবারের ঘটনার পরে মানুষের সেলফি-হিড়িক দেখে তা আবার প্রমাণিত।
Be the first to comment