বাড়িতে ঢুকে ছাত্র নেতাকে খুনের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল আমতায়। অভিযোগের তির পুলিশের পোশাক পরিহিত চার যুবকের বিরুদ্ধে। যদিও স্থানীয় থানার তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কোনও কর্মী বা আধিকারিক এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। কে বা কারা কী উদ্দেশে এই ঘটনা ঘটাল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
মৃত যুবকের নাম আনিস খান (২৮)। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া। বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। আনিসের বাড়ি সারদা খাঁ পাড়ায়। জানা গিয়েছে, প্রথমদিকে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে আইএসএফে যোগ দেন। পরিবারের লোকেরা শুক্রবার রাতে তাঁকে তিনতলা বাড়ির নিচে পড়ে থাকতে দেখেন। অভিযোগ, পুলিশের ছদ্মবেশে দুষ্কৃতীরা এসে তাকে খুন করেছে। পরিবারের দাবি, জোর করে তিন দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে ছাদে উঠে আনিসকে ছাদ থেকে ফেলে খুন করেছে। আনিস এলাকায় অন্যায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ বলে পরিচিত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে বাড়িতে ছিলেন আনিস। সেই সময় চারজন দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়িতে আসে। তিনজন সাধারণ পোশাকে থাকলেও একজন ছিল পুলিশের পোশাকে এবং তার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলেও দাবি। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তারা বারবার আনিসের নাম করে ডাকছিল। সেই সময় আনিসে বাবা সালাম খান বেরিয়ে আসেন। দরজা খুলতে চাননি তিনি। দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে দরজা খুলতে বাধ্য করে। দুষ্কৃতীরা জানায়, বাগনান থানায় আনিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে আটক করতে এসেছে।
সালাম খান দরজা খুলে দিলে আনিস কোথায় জানতে চায় তারা। সালাম জানান,আনিস বাড়িতে নেই। তার পরেও সাধারণ পোশাকে থাকা তিনজন সোজা ছাদে উঠে যায়। পুলিশের পোশাক পরা যুবক সালাম খানকে নিচে আটকে রাখে। জানা গিয়েছে, আনিস সেই সময় বাড়ির ছাদে বসে ছিলেন। আনিসের বাবা সালাম খান বলেন, “কিছুক্ষণ পর এই তিনজন নেমে আসে এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে বলে স্যার হয়ে গিয়েছে চলুন। এর পরেই তারা বেরিয়ে যায়।” সালাম আরও বলেন, “ধপ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ শুনি। এর পরে নিচে গিয়ে দেখি ছেলে পড়ে রয়েছে।”
এদিকে খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসী জমা হয়ে যায়। খবর পেয়ে আসে আমতা থানার পুলিশ। পুলিশকে প্রথমে দেহ তুলতে দেয়নি স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের ধরার দাবি জানান তাঁরা। শেষে দশটার পর পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আমতা থানার পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের তরফ থেকে কোনও তল্লাশি চালানো হয়নি। এই গ্রেপ্তারি সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। বাগনান থানার পুলিশও জানিয়েছে, তাদের তরফ থেকে কেউ তল্লাশি করতে যায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের ছদ্মবেশে দুষ্কৃতীরাই এসেছিল? পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে পরে আনিসের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
জানা গিয়েছে, আনিস কলকাতায় থাকে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। সাধারণত সপ্তাহান্তে বাড়িতে আসে। শুক্রবার সন্ধেয় তিনি বাড়ি এসেছিল ওই এলাকায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে রাত একটার পরে বাড়ি ফেরেন তিনি।
Be the first to comment