বিধ্বংসী আগুন কেড়ে নিলো দু’মাসের শিশুর প্রাণ

Spread the love

দুই মাসের শিশুর নিথর দেহ আগলে রয়েছেন বাবা। চারিদিক খুঁজেও মেলেনি একটা চাদর বা অন্য কিছু। যা দিয়ে ঢাকা যাবে ছোট্ট খুদের প্রাণহীন শরীর। অবশেষে হাসপাতালেরই নতুন পাপোষ দিয়ে নিজের ছোট্ট সন্তানকে ঢাকলেন রাজেশ যাদব। আন্ধেরির ইএসআইসি সরকারি হাসপাতালের আগুন কেড়ে নিয়েছে ওই কোলের শিশুর প্রাণ। অথচ, হাসপাতালে থাকারই কথা ছিল না তার। এখন সেই আক্ষেপই করে চলেছেন রাজেশ যাদব ও তাঁর স্ত্রী।

দুই মাস আগেই সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন রাজেশের স্ত্রী রুক্মিনী। কিন্তু, কয়েকদিন আগেই কিডনিতে স্টোন ধরা পড়ায় ইএসআইসি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হাসপাতালে নিয়ে যান রাজেশ। সোমবারও সেইমতোই শিশুকে দিয়ে আসেন, কিন্তু দুপুরে আর নিয়ে আসা হয়নি। রাজেশ ভেবেছিলেন, সন্ধ্যায় কাজ সেরে ফেরার পথেই নিয়ে যাবেন তাঁর খুদেকে। সেই ভাবনাই কাল হয়েছে বলে মনে করছেন রাজেশ । কারণ, সোমবার বিকেলেই বিধ্বংসী আগুন লাগে ওই হাসপাতালে।

খবর পেয়ে দৌড়ে হাসপাতালে দৌড়ে রাজেশ। তিনি  জানাচ্ছেন, ধোঁয়ায় ঢাকা হাসপাতালে তিনি কাউকে চিনতে পারছিলেন না। অবশেষে সাত তলায় স্ত্রী রুক্মিনীকে খুঁজে পান। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সিঁড়িতে পড়েছিলেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতেই রাজেশ তাঁর সদ্যোজাতর খোঁজ করেন। জ্ঞান ফিরতে রুক্মিনীও জানান, তাঁদের সন্তান  পাশেই শুয়েছিল। তাহলে কোথায় সে ! খোঁজ শুরু হয় সোমবার। হাসপাতালের অলি-গলি খুঁজতে শুরু করেন দম্পতি।

অবশেষে হাসপাতালেরই সিঁড়িতে  শিশুকে দেখতে পান রাজেশ। ছুটে গিয়ে দেখেন, সব শেষ।শিশুর নিথর ঠান্ডা দেহ জাপটে ওখানেই বসে পড়েন দম্পতি। জানা যাচ্ছে, আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছে তাঁদের ২ মাসের সন্তান।

মঙ্গলবারই মুম্বই হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট হয়েছে। তখনই জানা গিয়েছিল মৃতদের মধ্যে রয়েছে দুই মাসের শিশু। সেই শিশুই যে তাঁদের তা বুঝতে পারেননি রাজেশ। খোঁজ চালিয়ে নিজের সন্তানের দেহ উদ্ধার করেন।

আন্ধেরি হাসপাতালে এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাজেশের মতো অনেক অসহায় মুখ। চলছে আহত ১৪৭ জনের চিকিৎসা।যাঁঁদের বেশিরভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখনও এত বড় অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। দমকলের প্রাথমিক অনুমান রবার জাতীয় কোনও বস্তুতে আগুন লাগে, পড়ে তা ছড়িয়ে যায়।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মহারাষ্ট্রর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ। মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা গতকালই করেছেন তিনি।

সোমবার  সাত বছর আগে কলকাতার আমরি হাসপাতালের স্মৃতি ফিরে আসে আন্ধেরিতে। বাঁচার আশায় হাসপাতালের দোতলা, তিনতলা থেকে ঝাঁপ দিতে দেখা যায় অনেক রোগীকে। আতঙ্ক আর আর্তনাদে ভরে ওঠে গোটা হাসপাতাল চত্বর। এখনও সেই আর্তনাদ হাসপাতাল জুড়ে।আতঙ্ক, এই বুঝি চলে এল প্রিয় জনের মৃত্যুর খবর।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*