আনিস রহস্য সমাধানে সিট গঠন করল রাজ্য। নবান্নে সেকথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন উঠছে, আনিসের মৃত্যুর আড়াই দিনের মধ্যেও এখনও কেন অধরা অভিযুক্তরা? তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর আনিসের দাদা সাবির খান বলেন, ” দিদি থাকুক, ওঁ করুক না ,তদন্ত। আমাদের দিদির ওপর আশা রয়েছে। পুলিশের ওপর আশা নেই। পুলিশ যদি করতে চাইছে তদন্ত তো করুক না! আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা যাব বলেছিলাম। কিন্তু আমার বাবার হঠাৎ শরীর খারাপ হল, ওঁ প্রেসার-সুগারের রোগী। আবার মানসিক অবস্থা খারাপ। আনিস ওঁর জান ছিল। আনিসের জান গেছে। আমরা এখন যেতে পারছি না। দিদি যদি আসতে পারতেন, খুব ভালো হত। আমাদের গ্রামবাসীরা খুশি হত, আনিসের জন্য যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরাও খুশি হতেন। আজ নবান্নে যাচ্ছি না।”
আনিসের বাবা বিছানায় শুয়ে বললেন, “পুলকবাবু এসেছিলেন। আমাদের এমএলএ এসেছিলেন। দিদি ডেকেছিলেন। তাঁরা দিদির কাছে নিয়ে যেতে এসেছিলেন। যাব বলেছিলাম। কিন্তু আমার শরীর অসুস্থ। আমি আর আজকে যাচ্ছি না। দিদি এখানে এলে আমার পক্ষে ভালো হয়।”
আনিস মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের দাবিও ক্রমে জোরাল হচ্ছে। হস্তক্ষেপ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। আমি অলরেডি কথা বলেছি। ডিজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা অলরেডি ফরেনসিক রিপোর্টের ব্যবস্থা করেছে। ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক। কোনও মৃত্যুই আমাদের কাছে কাম্য নয়। আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভালো ছিল। আনিস আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। আমাকে অনেক হেল্পও করেছে ইলেকশনে। তাতে ও আমাদের ফেভারিট ছেলে। ঘটনাটা তদন্ত হবে। আমরা একটা সিট তৈরি করছি। সেই সিট চিফ সেক্রেটারি ডিজির নেতৃত্বে হবে। যেখানে সিআইডি থাকবে, সিট থাকবে, সবাই মিলে তদন্ত করবে। পরিবারকেও বলব বিশ্বাস রাখুন।”
তার আগেই অবশ্য আনিসের পরিবারকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। মুখ্য়মন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথমে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন আনিসের দাদা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরই আনিসের পরিবারের ‘স্ট্যান্ড পয়েন্ট’ বদলে যায়। তাঁরা জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারলে তাঁদের বাড়িতে আসুন, কারণ তাঁর বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবে এদিকে ‘দিদির ওপর আস্থা রয়েছে’ বলেও স্পষ্ট করে দেন আনিসের দাদা।
মুখ্যমন্ত্রী যাতে আনিসের বাড়িতে যান, সেই দাবি তুলেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “একটা কম বয়সের ছেলে, প্রতিবাদী ছেলে, ছাত্রনেতা খুন হয়েছে। এটা রাষ্ট্রীয় খুন। এনকাউন্টার নাকি পুলিশের পোশাকে তৃণমূলের গুণ্ডারা খুন? এটা পরে ঠিক করুক। কিন্তু বিচার চাই। এইসময় হঠাৎ তিন চার দিন পর, তথ্য প্রমাণ লোপাট করে দেওয়ার পর এখন মুখ্যমন্ত্রী খবর পাঠিয়েছেন, যদি ওঁরা আগ্রহী থাকেন, তাহলে দেখা করতে পারেন। ওঁরা যেন নবান্নে এসে দেখা করেন। রিজায়ানুরের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুও বাড়ি গিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে কোনও মিল নেই। তবুও ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে গিয়েছিলেন। আর এখানে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছেন।”
আনিসের মৃত্যু সারা রাজ্যে তোলপাড় ফেলেছে। এদিকে, আনিস মৃত্যুতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। রাজ্যের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
Be the first to comment