পুরো সিনেমার মতো চিত্রনাট্য সাজাত যুবক। প্রলোভন দেখিয়ে ফোটোগ্রাফারদের ফাঁদে ফেলাই ছিল তার কাজ। তার পর সুযোগ বুঝে দামি ক্যামেরা, লেন্স, হার্ড ডিস্ক নিয়ে ধাঁ। ছদ্ম নামে এই চুরি চক্র চালাত সে। গোটা শহরে এই যুবকের বিছানো জালে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন অনেক ফোটোগ্রাফারই। শেষে নীলেশ মণ্ডল নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। তার ডেরা থেকে উদ্ধার হয়েছে দামি ক্যামেরা-সহ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার জিনিস।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারিত হয়েছেন এমন অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন যাদবগড়ের বাসিন্দা শুভদীপ সরকার। তিনি ফোটোগ্রাফির কাজ করেন। তাঁকেও নানা লোভনীয় অফার দিয়ে পুরীতে নিয়ে গিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালায় নীলেশ।
শুভদীপের কথায়, নীলেশ তার পরিচয় দিয়েছিল অমিতাভ পাল নামে। জানিয়েছিল, সে ম্যাগাজিনে কাজ করে। পুরীতে ভাল ফটো শ্যুটের অফার দিতে এসেছে শুভদীপকে। তার কথায় বিশ্বাস করে ক্যামেরা-সহ যাবতীয় সরঞ্জাম গুছিয়ে পুরীতে রওনা দেন শুভদীপ। সঙ্গে যায় অমিতাভ ওরফে নীলেশও। পুরীর সমুদ্রের সামনে ছবি তোলার পর্ব শুরু হয়। পরে খাবার খেতে হোটেলের ফেরার সময় অমিতাভের জিম্মাতেই ক্যামেরা রেখে যান শুভদীপ। তাঁর কথায়, “বিশ্বাস করে দামি ক্যামেরা অমিতাভের কাছেই রেখে গেছিলাম। পরে ফিরে এসে দেখি কেউ কোথাও নেই। আমার কয়েক লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতিও খোয়া গেছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, চুরি যাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল সোনির এ-৭ ট্রিপলআই ক্যামেরা, দুটি লেন্স, একটি জুম এইচ১ রেকর্ডার, মেমোরি কার্ড-সহ বেশ কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস। কলকাতা ফিরে এসে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এবং হোয়াটস্অ্যাপের নানা গ্রুপে এই কথা ছড়িয়ে দেন শুভদীপ এবং জানতে পারেন তাঁরই মতো আরও কয়েকজন এই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন। গড়ফা থানায় অভিযোগ দাযের করেন তাঁরা।
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, অমিতাভ নামে খোঁজ শুরু হয় প্রথমে। অভিযুক্তের একটা ছবি জোগাড় করা হয়। জানা যায়, গড়িয়াহাটের একটি হোটেলে এমন ব্যক্তিকে দেখা গেছে যার চেহারার সঙ্গে ছবির অমিতাভর চেহারার বিস্তর মিল। সাব ইন্সপেক্টর রাজীব দাসের নেতৃত্বাধীন গড়ফা থানার বিশেষ টিম গিয়ে পৌঁছয় ওই হোটেলে এবং অমিতাভকে গ্রেফতার করে। জেরায় সে জানায় তার আসল নাম নীলেশ মণ্ডল। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে।ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে, ৪টি ল্যাপটপ, একটি সোনি এ৭ মার্ক-৩ ফুল ফ্রেম ক্যামেরা, একটি ক্যাননের ইওএস ৫-ডি মার্ক-৩ ফুল ফ্রেম ক্যামেরা, বেশ কিছু দামি লেন্স, হ্যান্ডি রেকর্ডার, ক্যামেরার নানা যন্ত্রপাতি, ৬ টি মোবাইল ফোন, পাওয়ার ব্যাঙ্ক, হার্ড ডিস্ক, মেমোরি কার্ড, ক্যামেরা-ল্যাপটপের ব্যাগ-সহ আরো নানা কিছু। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার জিনিস। তা ছাড়াও ১৬ টা সিম কার্ড, ৫টা আধার কার্ড, ভুয়ো ভোটার কার্ড ও প্যান কার্ডও উদ্ধার হয়েছে ধৃতের কাছ থেকে।
Be the first to comment