নোটবন্দি নিয়ে গত দুবছরে যতই সমালোচনা হোক, বৃহস্পতিবার তার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর দাবি, সর্বস্তরে ডিজিটাল লেনদেন চালু করার জন্য একটা বড়সড় ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার ছিল। অনেকে না জেনেই এর সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, বাতিল হওয়া পাঁচশ, হাজার টাকার নোট সবই তো ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। তাঁদের মনে রাখা দরকার নোট বাজেয়াপ্ত করা নোটবন্দির উদ্দেশ্য ছিল না।
নোটবন্দি নিয়ে নানা মহল থেকে সমালোচনাও হয়েছে এদিন ।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, নোটবন্দির কুফলগুলি দুবছর বাদে ফুটে উঠেছে আরও স্পষ্ট করে। সরকার যেন তা থেকে শিক্ষা নেয়। আগামী দিনে এমন প্রথাবহিৰ্ভূত পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
দুবছর আগে ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আচমকাই ঘোষণা করেন, ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করা হচ্ছে। তার পরে কয়েকমাস বাজারে নোটের সংকট দেখা দেয়।
জেটলি বলেন, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল, কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলস্রোতে নিয়ে আসা ও টাকার মালিকদের কর দিতে বাধ্য করা। ২০১৪ সালের মে মাসে এনডিএ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন করদাতার সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮০ লক্ষ। গত চার বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৮৬ লক্ষ। এই সরকার মেয়াদ পূর্ণ করার সময় কর আদায়ের পরিমাণ হবে আগের চেয়ে দ্বিগুণ।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং বলেছেন, নোটবন্দি যে কেমন বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তা এখন পরিষ্কার। বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম ও পেশা নির্বিশেষে সকলেরই ক্ষতি হয়েছে। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন কমে গিয়েছে অনেকখানি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, যারা ভারতের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ, তারা এখনও নোটবন্দির শক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
মনমোহন সিংয়ের দাবি, নোটবন্দির ফলে নতুন চাকরির সুযোগও সৃষ্টি করা যায়নি। তাঁর কথায়, আমাদের যুবকদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা জরুরি ছিল। কিন্তু নোটবন্দি অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। নতুন চাকরি সৃষ্টি করা যায়নি। এর ফলে বাজারে কাঁচা টাকার সংকট দেখা গিয়েছে। ফলে পরিকাঠামো নির্মাণের ওপরে যেমন প্রভাব পড়েছে, তেমন বিপদে পড়েছে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। নোটবন্দির দুই বছর পূর্তিতে আমাদের বোঝা উচিত, খুব সতর্কতার সঙ্গে দেশের আর্থিক নীতি স্থির করা প্রয়োজন ।
Be the first to comment