অরুন্ধতী মুখার্জি, জয়েন্ট এডিটর, আজকাল
বাংলার মহিলা সাংবাদিকতার তখন ভোরবেলা। অরুন্ধতী মুখার্জি, সেই সময় থেকেই সাংবাদিকতা করেন। মহিলা সাংবাদিক, পুরুষ সাংবাদিক বিভাজনে আমরা বিশ্বাসী নই, কিন্তু মেয়েদের তখন সাংবাদিকতা করতেই বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হত। অরুন্ধতী ৮০’র দশকে যে দু’একজন মহিলা সাংবাদিক সাহসের সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ করতেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মূলতঃ প্রশাসনিক বিটের রিপোর্টার। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে রাজনৈতিক, সামাজিক যে ধরণের স্টোরি করতে বলা হোত, একসেপ্ট করতেন চ্যালেঞ্জ। এখনও তেজী ঘোড়ার মত দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম চষে বেড়িয়ে স্পট রিপোর্টিং করতে বিন্দুমাত্র ক্লান্ত হননা অরুন্ধতী। উত্তর প্রদেশের নির্বাচন থেকে অথবা বম্বেতে মুখ্যমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট সবেতেই sincere অরুন্ধতী। একটা পয়েন্টও মিস হলে রীতিমত টেনসড দেখায় তাঁকে। আমার মনে আছে পাহাড়ে মমতার মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে গুরুং বাহিনীর তাণ্ডবের সময় একেবারে সামনে চলে যাচ্ছিলেন অরুন্ধতী। যেকোনো সময়েই আক্রান্ত হতে পারতেন। পাহাড়ে এখন বলে নয় বহু আগে থেকেই বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট কভার করেছেন অরুন্ধতী।
৮ই মার্চ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, হ্যাঁ এখনও আমাদের নারী দিবস পালনে যৌক্তিকতা আছে। এখনও মেয়েদের নিগ্রহ, অত্যাচারের শিকার হতে হয়। এর ওপর আছে পুরুষের যৌন লালসা এবং ক্ষমতার উগ্রতা। সুতরাং এই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে নারীদিবস মহিলাদের একটু হলেও এগিয়ে দেয়।
যদি আমাদের রাজ্যের কথা ধরা যায়, তাহলে আমরা আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছি। আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেয়েরা নিজের অর্থনেতিক স্বাধীনতাকে প্রগতির, উন্নয়নের মাপকাঠি হিসাবে দেখেছে। একদম নিম্নবিত্ত পরিবারেও বাসন মেজে বা ঘর মুছে স্ত্রী রোজগার করেন আর তাঁদের স্বামীরা সেই পয়সায় বসে খায়। তার ওপর স্ত্রীর ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার। এইরকম পরিস্থিতির বদল প্রয়োজন।
অরুন্ধতী বারবার এই প্রসঙ্গ টানছিলেন। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারী স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত। যে মেয়ে নিজে কোনো জিনিস কিনতে পারে না যাকে হাত পাততে হয় অন্য কারোর কাছে সে তো পরাধীন। প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই, তাহলে কি সব গৃহবধুরাই পরাধীন? অরুন্ধতীর ঠোঁটে জবাব তৈরী, তারা পারিবারিক জীবনে সুখী কিন্তু স্বাধীন নয়। প্রশ্ন করি আমাদের দেশে ইন্দিরা গান্ধী, প্রতিভা পাটিল, মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতার শীর্ষে বসেছেন, এঁরা কি নারীর ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত নন। অরুন্ধতী বলেন এগুলি দৃষ্টান্ত হিসাবে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সার্বিকভাবে দেখতে গেলে মেয়েদের ক্ষমতায়ন যতটা হওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি। প্রশ্ন করি, আমাদের শহরের মহিলারা অটো চালাচ্ছে। অরুন্ধতী বলেন, হ্যাঁ নিশ্চয়ই এটি বড়ো কাজ, এভাবেই সমস্ত শ্রেণীর মধ্যে স্বাধীনতার আস্বাদ পাবে। আর যতদিন মেয়েরা সম্পূর্ণ স্বাধীন না হবে ততদিন তাদের এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি উপায় হিসাবে ৮ই মার্চ নারী দিবস পালন করার প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। যেমন ভাবে S.C, S.T দের ক্ষেত্রে বা গরীব মানুষদের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করে তাদের খানিকটা এগিয়ে দেওয়ার দরকার আছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনি সাবলম্বি হওয়া না পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন আছে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রয়োজন সংরক্ষণ। মেয়েদের সংরক্ষণ যোগ্যতার মাপকাঠিতে করা উচিত বলেন অরুন্ধতী। পঞ্চায়েতে বহু মহিলা জন প্রতিনিধি আছেন যাদের নিজেদের কোনো শিক্ষা নেই। স্বামীরাই পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে বলা যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত ক্ষমতা থাকলে তবেই জন প্রতিনিধি হওয়া বাঞ্ছনীয়। সবশেষে বলি, মেয়েদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। তবেই হবে নারী ক্ষমতায়ন। সেদিন হয়তো আর আলাদা করে নারী দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।
Be the first to comment