কেরল, রাজস্থান পঞ্জাবের পর এবার পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য বিধানসভায় পেশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রস্তাব। প্রস্তাবের পক্ষে সায় ছিল বাম, কংগ্রেস বিধায়কদের। তবে এক্ষেত্রেও কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেয় বাম-কংগ্রেস৷ সিএএ বিরোধী প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিজেপি। শেষমেশ সর্বসম্মতিক্রমে বিধানসভায় গৃহীত হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রস্তাব। সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পেশ হলেও প্রস্তাবের পক্ষে ভোটাভুটিতে অংশ নেননি বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা৷
কেরল, পঞ্জাব, রাজস্তানের পথেই হাঁটল পশ্চিমবঙ্গ। সোমবার রাজ্য বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পেশ করেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হয় বিধানসভায়। আগাগোড়া প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। ততই কেন্দ্র বিরোধিতায় সুর চড়াতে থাকেন তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেসের বিধায়করা। এরই পাশাপাশি মুখ্য়মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্য়ে আঁতাতের অভিযোগ তুলেও বিধানসভায় সরব হতে দেখা যায় বাম-কংগ্রেস বিধাযকদের৷ পালটা প্রতিবাদ করতে থাকেন তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে অন্য়রা৷ এমনকী খোদ মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও বাম-কংগ্রেসের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন৷ একইসঙ্গে সিএএ বিরোধী প্রস্তাবে কোনও সংশোধনী না আনার জন্য় বাম-কংগ্রেস বিধাযকদের অনুরোধ করেন৷
গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে এরাজ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রস্তাব পাশ করানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করতে দেখা যায় কংগ্রেসকে। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী এই ইস্যুতে প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রীর।
উলটোদিকে, বামেরা সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ নিয়ে টিপ্পনি কাটতে শুরু করে রাজ্য সরকারকে। মুখে বিরোধিতা করলেও কেন বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশে সরকার দেরি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন সিপিএম নেতৃত্ব। এরই মধ্যে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন ২৭ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার রাজ্য বিধানসভায় নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রস্তাব পাশ করানো হবে। সেই মতো সোমবার দুপুরে বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পেশ করেন পরিষদীয় মন্ত্রী। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হয় বিধানসভায়৷
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুরু থেকেই কেন্দ্র-বিরোধিতায় সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলে সিএএ বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। অন্য রাজ্যগুলিকেও সিএএ ইস্যুতে একজোট হতে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ হয়েছথে বাম শাসিত কেরলে। এমনককী দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসেবে নাগরিকত্ব আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের করেছে কেরল। এনপিআর নিয়েও কেন্দ্র বিরোধিতায় অনড় পিনারাই বিজয়নের সরকার। এনপিআর নিয়ে কোনও কাজে যুক্ত হলে সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে পিনারাই বিজয়নের সরকার।
পঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলনে সামিল হয় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে একাধিক সংগঠন। তারপরই পঞ্জাবে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার সিএএ বিরোধিতায় প্রস্তাব পাশ করেছে বিধানসভায়। তার দিন কয়েক পরেই রাজস্থানের অশোক গেহলতের সরকারও সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করেছে। এবার ওই একই পথে হেঁটে রাজ্য বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করানোর উদ্য়োগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।
Be the first to comment