বিধানসভার অধিবেশনের দিন বৃদ্ধির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি বিরোধীদের

Spread the love

বিধানসভার অধিবেশনের সময় বৃদ্ধির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানাল কংগ্রেস এবং বাম পরিষদীয় দল। আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেই অধিবেশন চলবে দু’দিন।

বিরোধীদের দাবি, অধিবেশন ন্যূনতম দুই সপ্তাহ চালানো হোক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধানসভায় আলোচনা করতে চায় বিরোধীরা। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি সংক্রান্ত তিনটি আইনের পরিপ্রেক্ষিতে, এ রাজ্যে সার্বিক জনস্বার্থে এই আইনের প্রতিষেধমূলক আইনি ব্যবস্থা জরুরি। কোরোনার সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক দিশা পেতে বিধানসভায় আলোচনা হওয়া জরুরি বলে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে বিরোধীরা।

বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস পরিষদীয় দল ৷ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য বিধানসভার অধিবেশন ন্যূনতম দুই সপ্তাহ চালানো হোক। রাজ্যে গত বছরের বাজেট অধিবেশনের পর দীর্ঘ সময় ধরে করোনা সংক্রমণের কারণে বিধানসভায় কোনও আলোচনা করার সুযোগ হয়নি। মাঝে একদিন কিছুক্ষণের জন্য নিয়ম রক্ষার মনোভাবে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হয়েছে।

কিন্তু কোন আলোচনা ছাড়াই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভার অধিবেশন হয়েছে। ১৫ দিনের জন্য সংসদ অধিবেশন হয়েছে। আবারও সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়েছে। রাজ্যের মানুষের স্বার্থে, বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা বিধানসভায় অধিবেশনে আলোচনা করা খুবই দরকার। বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে শাসক দলের সদস্যদের সংখ্যাধিক্য থাকার কারণে বিরোধীদের বিধানসভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কিত কোন প্রস্তাবই গুরুত্ব পায় না। সেই কারণেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য বিধানসভার অধিবেশন অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হোক বলে দাবি জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, কোরোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা, জীবন-জীবিকা, কর্মসংস্থান বহুলাংশে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া পেট্রোলিয়াম পণ্যে অভাবনীয় মূল্যবৃদ্ধি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশার চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। এই বিষয়ে অবশ্যই বিধানসভায় আলোচনা হওয়া উচিত। রাজ্যের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। যার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের সংবিধান বহির্ভূতভাবে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনা হওয়া জরুরি। কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিল করার জন্য সর্বসম্মত যে প্রস্তাবের খসড়া পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাঠানোর কথা ছিল, তা এখনও এসে পৌঁছায়নি বিরোধীদলের নেতাদের কাছে। তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবদুল মান্নান।

তবে বিরোধীদের দাবি বিধানসভার অধিবেশনের সময় বাড়ালে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ যারা ভিন রাজ্যে কাজ করেন। যাদের পরিযায়ী শ্রমিক বলা হচ্ছে, তাদের নাম নথিভুক্ত করুন ৷ সরকারি পরিচয়পত্র প্রদান, রাজ্যের ভিতরে এবং ভিন রাজ্যে কাজের সুব্যবস্থা সহ রাজ্যের বেশিরভাগ জেলাকে ‘গরীব কল্যাণ যোজনা’র অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি। রাজ্যের শিক্ষক পদ সহ সরকারি দপ্তরে বিভিন্ন নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষার স্বচ্ছতা বেআব্রু হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে বিরোধীদের তরফে । চাকরি প্রার্থীদের দিশাহীন হয়ে বছরের পর বছর, আদালত ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে এবং রাজ্যের যুবসমাজের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সঠিক রূপরেখা তৈরি করতে বিধানসভায় আলোচনা হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

সবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাম এবং কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে যথাক্রমে সুজন চক্রবর্তী এবং আব্দুল মান্নান আবেদন জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধানসভার নেতা হিসেবে বিরোধীদের বিধানসভার জনস্বার্থে আলোচনা থেকে যাতে বঞ্চিত না করা হয় তা দেখার জন্য। বিধানসভার অধিবেশন ন্যূনতম দুই সপ্তাহ চালানো হোক বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*