দেবাশিস ভট্টাচার্য, সম্পাদক
(প্রতিবেদক ৫৪ বার অযোধ্যা গিয়েছেন, ৮৯ এর ভূমি পুজো,শিলান্যাস, ৯০ এর করসেবা, ৯২ এর বাবরি ধ্বংসের ঘটনা সহ বহু ঘটনার সাক্ষী।)
স্বাধীনতার পর থেকে একটা বিতর্ক ছিল কে বড় , সংসদ নাকি সুপ্রিমকোর্ট ? সংসদ আইন সভা আবার সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারও আইন হয়ে যায় । এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে। ১৯৬৭ সালে গোলকনাথ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির বেঞ্চ একটা রায় দিয়েছিলো। আবার ১৯৭৩ সালে কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন ৯জন বিচারপতি পাল্টা মত পোষণ করেন। মামলার বিষয় ছিল কার ক্ষমতা বেশি? শনিবার ৯ নভেম্বর ২০১৯ সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে অযোধ্যা নিয়ে রায় দিয়েছেন । আগামী দিনে রিভিউ পিটিশন জমা পড়লে আরও ৯ বা ১১ বা ১৩ জন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ হলে তারা কি বলবেন তা কিন্তু এখনি বলা যায় না ।
অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিলো তা অনেকেরই আন্দাজ ছিল । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ শুক্রবার ৮ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের মুখ্য সচিব এবংঐ রাজ্যের পুলিশের ডিজি কে ডেকে পাঠান। প্রধান বিচারপতি ওই অফিসারদের সঙ্গে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন । আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য উত্তরপ্রদেশের নির্বাচিত সরকার আছে । মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার জন্য কিছু পদক্ষেপও নিয়েছেন । সেটা মুখ্যমন্ত্রীর কাজ।সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সেটা কাজ বলে এতদিন জানা ছিলো না । বিচার ব্যবস্থার অতি সক্রিয়তা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করেননি। কিন্তু এই প্রতিবেদকের মনে এই বিষয়ে প্রশ্ন জেগেছে । আদালতকে অবমাননা করার ইচ্ছা বিন্দুমাত্র নেই।পূর্ণ মর্যাদা,আস্থা আছে । তবু মনে প্রশ্ন জাগে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ভিত্তি হলো আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া(এ.এস.আই) পর্যবেক্ষণ।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস সামনে থেকে দেখেছি। ধ্বংসের পর ASI অধিকর্তা সহ অন্য অফিসাররা দাঁড়িয়ে থেকে ওখানে অনেক মাটি খুঁড়ে, নীচে থাকা কিছু জিনিস ওপরে তুলেছিলেন।তা সেদিন দেখেছি।সুপ্রীম কোর্ট বলেছে,এ.এস.আই জানিয়েছে মাটির নিচে ইসলামিক কোনো কাঠামো পাওয়া যায়নি। আবার মন্দিরের কোনো কাঠামোও পাওয়া যায়নি। তবে কিছু একটা কাঠামো ছিলো,খালি জমি ছিল না । হতে পারে কোন একটা নির্মাণ ভেঙে ১৫২৮ সালে সম্রাট বাবর তাঁর সেনাপতি মীর বাঁকি কে দিয়ে একটা বিরাট মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন । সেই মসজিদ ৪৬০ বছর পর একটা স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে ইস্যু হয়ে গেলো! ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান তৈরি হয় । পরাধীন ভারতে এই বিশাল দেশের অনেক জায়গায় অনেক কিছু ঘটেছে। তেমন একটা ঘটনা নিয়ে ৪৯০ বছর পর অন্য কথা শুনতে হলে খটকা লাগে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেছেন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস বেআইনি হয়েছে।সেটা যদি বেআইনি হয়, তাহলে আরেকটা খটকা লাগে।প্রশ্ন জাগে বাবরি মসজিদ যদি বেআইনিভাবে ভাঙ্গা না হতো তাহলে এ.এস.আই পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট জানা যেত না। রায় জেনে প্রশ্ন জেগেছে বাবরি মসজিদ ধ্বংস না করলে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী এখানে রাম মন্দির কিভাবে নির্মাণ হত?রায় পড়ে মনে পড়ছিল 1990 সালে লাল কৃষ্ণ আদবানি ঠিক এমনই প্রস্তাব দিয়েছিলেন।আদবানিও বলেছিলেন হিন্দুদের বিশ্বাস রাম ঐখানেই জন্মেছেন। ওটাই রামের গর্ভগৃহ । মুসলিম ভায়েরা এটা মেনে নিক। তাহলে আমরা মসজিদ পাশেই কোথাও নির্মাণ করে দেব ।ওখানেই বিরাট রাম মন্দির তৈরি করব। যা আজকের রায়ে বলা হলো । রায়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংস কে বেআইনি বলা হলো। অথচ সেই ধ্বংসকান্ডের নেতা-নেত্রীদের শাস্তি দেওয়ার কোন কথা বলা হলো না।
চন্দ্রশেখর প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় 1990 সালের জানুয়ারি মাসে মন্দিরের দাবীদারদের সাথে বৈঠকে বসে বলেছিলেন ১৫২৮ সালে একটা নির্মাণ কে নিয়ে এত বছর পরেও আপনারা কেন ইস্যু করছেন? দেশের অনেক জ্বলন্ত সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানে সরকারকে সাহায্য করুন।
হিন্দু ভোট হারানোর ভয় বনাম রায় নিয়ে খটকা প্রশ্ন রাজনীতিকদের আলোড়িত করেছে কিনা জানিনা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও মর্যাদা জানিয়ে বলছি খটকা লাগছে
Be the first to comment