বিজেপির কিছু নেতার গালে সপাটে থাপ্পড় কষাল আসানসোল।’ নিজের পুরনো কেন্দ্রে নতুন দল তৃণমূলের বিরাট জয় নিয়ে মুখ খুললেন বাবুল সুপ্রিয়। আসানসোলে জয়ের ব্যবধানে বাবুল সুপ্রিয়র ২০১৯ সালের ব্যবধানকেও টপকে গিয়েছেন বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু নিজের ‘রেকর্ড’ ভেঙে যাওয়ায় একেবারেই অখুশি নন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উলটে উচ্ছ্বসিত। শত্রুঘ্নর জয়কে হাতিয়ার করেই বাবুল সুপ্রিয় বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন।
নিজের পুরনো কেন্দ্রে পুরনো দল বিজেপির এই শয্যাশায়ী দশা দেখে বাবুল টুইট করে বললেন,”সেইসব বিজেপি নেতাদের মুখগুলো দেখতে ইচ্ছা করছে যারা আমার পরিশ্রমকে গুরুত্ব দেয়নি। যারা বলেছিল আসানসোলে বিজেপির টিকিটে একটা দেশলায় কাঠিকে দাঁড় করালেও জিতে যেত। সেইসব বিজেপি নেতাদের মুখে সপাটে থাপ্পড় মেরেছে আসানসোল। তাই আসানসোলবাসীকে আমার ধন্যবাদ।” তিনি বোঝাতে চাইলেন, এতদিন আসানসোলে বিজেপি জিতত বাবুলের ক্যারিশ্মাতেই।
আসানসোল একটা সময় ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি। নয়ের দশক থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা এই লোকসভা কেন্দ্রটি দখলে রেখেছিল বামেরা। কখনও হারাধন রায়, কখনও বিকাশ চৌধুরী কখনও বংশগোপাল চৌধুরী জিতেছেন এই কেন্দ্র থেকে। রাজ্যে পালাবদলের পর প্রথম লোকসভা নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ সালে বামেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তৃণমূল কেন্দ্রটিতে দাঁত ফোটাতে পারেনি। অপ্রত্যাশিতভাবে ৭০ হাজারের বেশি ভোটে আসনটি দখল করেন নেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার করে ফেলেন বাবুল।
বাবুলের পদত্যাগের পর এই কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হন বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা। ‘বিহারীবাবু’র হাত ধরেই প্রথমবার আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রথমবার জোড়াফুল ফুটল। শুধু জোড়াফুল ফোটাই নয়, বিজেপি রীতিমতো ধরাশায়ী। ২০১৯ লোকসভায় বাবুল যে রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছিলেন, সেটাকেও এবার ছাপিয়ে গিয়েছেন শত্রুঘ্ন। বিহারীবাবুর জয়ের ব্যবধান ৩ লক্ষেরও বেশি। বিজেপির ভোট প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ লোকসভায় বিজেপির টিকিটে বাবুল যেখানে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে এবার অগ্নিমিত্রা পল মোটে ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ বিজেপির ভোট কমেছে ২১ শতাংশ।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বাংলায় বিজেপির অবক্ষয় শুরু হয়েছে। বিগত কয়েকটি উপনির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে, পুর নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে। এবার আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফল বিজেপির অবক্ষয়ের সেই তত্ত্বকে কার্যত প্রতিষ্ঠা করে দিল। আসানসোলে বিজেপির হারের ব্যবধান অন্তত সেকথাই বলছে।
Be the first to comment