অংশুমান চক্রবর্তী –
দশভূজা, অসূর দলনী মূর্তি, সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, গণেশ। শরতে মন্ডপ আলো করে এভাবেই আসেন মা, বসন্তেও তাই। তবে বসন্তে নেই শরতের উন্মাদনা। শারদার তুলনায় বাসন্তীর আরাধনা যেন অনেকটা দায়সারা। অথচ পলাশ শিমূলের সময়ের এই পুজোই আসল দুর্গাপুজো। শিউলী ফোটার দিনের পুজো তো অকাল বোধন। এসেছে শ্রী রামচন্দ্রের হাত ধরে। তবে আপামর জনগণ শারদীয়া দুর্গোৎসবকেই যেন বেশি আপন করে নিয়েছে। অলিতে গলিতে, পাড়া্ বাড়িতে শরত কালে হয় দশভূজার আরাধনা। আনন্দ উৎসব, হৈ হল্লা, নতুন জামা, ঠাকুর দেখা, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরা-ফেরা সব ঐ সময়ই। অন্যদিকে সংখ্যায় কম হলেও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বাসন্তী পুজো আয়োজিত হয় নিষ্ঠার সঙ্গে। একই সময় পূজিতা হন মা অন্নপূর্ণা। তবে অন্নপূর্ণা পুজো মূলত হয় গৃহস্থ বাড়িতে। ক্লাব অথবা বারোয়ারি উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হয় বাসন্তী পুজো। শারদীয়া দুর্গোৎসবের পাশাপাশি হাওড়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ধুমধাম সহকারে বাসন্তী পুজো আয়োজিত হয়।
দাসনগর থানা সংলগ্ন আজাদ হিন্দ সংঘ দীর্ঘ ২৭ বৎসর ধরে সাড়ম্বরে করে আসছে বাসন্তী পুজো। নিষ্ঠার সাথে পালিত হয় এই পুজো। এই ক্লাব প্রাঙ্গনে আছে নিজস্ব ঠাকুর দালান। সেখানেই মা পূজিতা হন। পুজো উপলক্ষ্যে প্রতিদিন বসে মেলা। খাবার জিনিস, সাজের জিনিস, ছোটদের খেলনা হরেক রকমের পসরা বসে এই মেলায়। প্রতিদিন আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় বাসন্তী পুজো হিসাবে এই পুজোর স্বীকৃতি। কাছেই দাসনগর রেল স্টেশন। পুজো মন্ডপের পাশ দিয়ে চলে গেছে আমতা রোড। বিভিন্ন রুটের বাস চলে এই পথ দিয়ে। ফলে স্থানীয় মানুষজনের পাশাপাশি প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন প্রতিমা দেখার টানে।
হাওড়া জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পুজো বাসন্তী পুজো বালটিকুরি ভ্রাতৃসংঘের পুজো। এই বছর রজত জয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ করেছে এই পুজো। তাই নিষ্ঠার সাথে যুক্ত হয়েছে আড়ম্বর। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। সাবেক প্রতিমার পাশাপাশি অবর্ণনীয় আলোকসজ্জা দেখার টানে বহু লোক সমাগম হয় এই পুজোয়। এই সময় হাওড়ার বিভিন্ন বিভিন্ন বনেদি পরিবারে আয়োজিত হয় অন্নপূর্ণা পুজো। গড়ভবানিপুরে কোঁচ পরিবারে বহু বছর ধরে হয়ে আসছে অন্নপূর্ণা পুজো। কুমারী পুজো এই পুজোর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাশাপাশি আয়োজিত হয় অন্নকূট উৎসব।
একটা কথা না লিখলে হাওড়ার এই বসন্তকালীন পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায় তা হলো হাওড়ার রামরাজাতলার রামনবমী। চৈত্র মাসের নবমীতে রাম-সীতার পুজো হয়। শ্রাবণের শেষ রবিবারে হয় বিসর্জন। এই চার মাস ধরেই চলে মেলা। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি হাওরার বিভিন্ন গ্রামে দেবী দুর্গা কোথাও বা বাসন্তী রূপে ক্লাবে বা বারোয়ারি পুজোয় কোথাও বা গৃহস্থ বাড়িতে অন্নপূর্ণা রূপে পূজিতা হন।
Be the first to comment